অনেক আগে থেকেই মু'সলিম ঐতিহাসিকদের মতে কোরীয় উপদ্বীপের সঙ্গে মু'সলিম ব্যবসায়ীদের সংযোগ স্থায়িত্ব খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগে। মু'সলিম ঐতিহাসিক ও ভূগোলবিদ ইবনে খারদাজবাহের বর্ণনা মতে কোরিয়ান উপদ্বীপে খ্রিস্টীয় নবম শতকে শিলা রাজ্যে মু'সলিম'দের স্থায়ী আবাস গড়ে ওঠে। যখন আরব ও পার্সিয়ান মু'সলিম ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ সেখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
খ্রিস্টীয় ১৬ শতক পর্যন্ত কোরীয় উপদ্বীপে বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে মু'সলিম ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ, মু'সলিম'দের সঙ্গে সখ্যতা, বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে ম'সজিদ নির্মাণ। এমনকি প্রশাসনিক পদে মু'সলিম'দের দায়িত্ব পালনের বিবরণ পাওয়া যায়। এরপর শাসকদের বৈরী মনোভব, আন্তর্ধ'র্মীয় বিয়ে, ইস'লামী জ্ঞানচর্চার অভাব এবং ইস'লামী ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি কারণে কোরীয় উপদ্বীপে মু'সলিম'দের স্বকী'য়তা ও অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে যায়। ১৯১০ সালে জা'পান কোরীয় উপদ্বীপের দখল নেওয়ার পর বহু সংখ্যক কোরিয়ান নাগরিক চীনে আশ্রয় নেয় এবং মু'সলিম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে।
এছাড়া কোরিয়া যু'দ্ধের সময় তুরস্ক দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ নেয় এবং এখানে প্রায় কয়েক হাজার সৈন্য দেশটিতে দায়িত্ব পালন করে। তখন তুর্কি সে'নাদের সংশ্রবে বহু কোরিয়ান নাগরিক ইস'লাম গ্রহণ করেন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে কর্ম'রত কোরিয়ান নাগরিকরাও ইস'লাম গ্রহণ করে, অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্ম'রত মু'সলিম অ'ভিবাসীদের মাধ্যমেও বহুজন ইস'লাম গ্রহণ করেছে। ১৯৫৫ সালে তুর্কি সে'নাদের তত্ত্বাবধানে সিউলে প্রথম অস্থায়ী ম'সজিদ নির্মিত হয়। ১৯৭৬ সালে মু'সলিম দেশগুলোর সহযোগিতায় সিউলে স্থায়ী ম'সজিদ নির্মিত হয়।
এদিকে কোরিয়ানদের সঙ্গে ইস'লামের সংযোগ প্রায় ১২শ’ বছর আগে হলেও গত শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত কোরিয়ান ভাষায় কোরআনের কোনো অনুবাদ ছিল না। ড. হামিদ চৈ ইয়ং কিল কোরিয়ান ভাষায় কোরআনের অনুবাদ করেন। কাজটি করতে তার সময় লেগেছিল সাত বছর। তিনি ‘মু'সলিম ওয়ার্ল্ড লিগ’-এর সদস্য এবং ‘কোরিয়ান মু'সলিম ফেডারেশন’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পেশাগত জীবনে ড. হামিদ চৈ ইয়ং কিল একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কর্ম জীবনে মিয়নজি বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ড. হামিদ চৈ-এর বর্তমান বয়স ৭০ বছর। তবে তার শৈশব ও পারিবারিক ইতিহাস স'ম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ২০০৮ সালে তিনি কিং আবদুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর ট্রান্সলেশন’ লাভ করলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তার নাম উচ্চারিত হয়।
গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যানুসারে ড. হামিদ চৈ ১৯৭৫ সালে হানকুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও অর্জন করেন। তিনি ইস'লামিক ইউনিভা'র্সিটি অব ম'দিনা থেকে ‘ফান্টামেন্টালস অব রিলিজিয়ন অ্যান্ড দাওয়াহ’ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন (১৯৭৬-১৯৮০ খ্রি.)। এ সময় আরববিশ্বের খ্যাতিমান আলেম শায়খ আবদুল্লাহ বিন বাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালে সুদানের খার্তুমে অবস্থিত উম'দুর্মান ইস'লামিক ইউনিভা'র্সিটি থেকে ‘ইস'লামিক কল ইন কোরিয়া’ শিরোনামে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
এদিকে ড. হামিদ চৈ ইয়াং কিল আল্লামা শফিউর রহমান মুবারকপুরি রচিত মহানবী (সা.)-এর জীবনী গ্রন্থ ‘আর-রাহিকুল মাখতুম’-এর কোরিয়ান অনুবাদের জন্য ২০০৮ সালে তিনি কিং আবদুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর ট্রান্সলেশন’ লাভ করেন। তবে জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো কোরিয়ান ভাষায় পবিত্র কোরআনের অনুবাদ সম্পন্ন করা। এটিই কোরিয়ান ভাষায় কোরআনের প্রথম অনুবাদ। এছাড়া তিনি ৩০টির বেশি ইস'লামী বই কোরিয়ান ভাষায় ভাষান্তর করেছেন। তথ্যসূত্র : আরব নিউজ।