ঘূর্ণিঝ’ড় ইয়াস ও পূর্ণিমা'র প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে বরিশালের কযেকটি উপজে'লার চর ও নিম্নাঞ্চল ত’লিয়ে গেছে। ফলে কয়েক হাজার মানুষ পানিব’ন্দি হয়ে পড়েছেন ওই সব এলাকায়। অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষ’তিগ্র’স্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দম’কা হাওয়া গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি ভে’ঙে পড়ায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ ব’ন্ধ রয়েছে। জে'লার বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা'র ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানির উচ্চতা বৃ’দ্ধি পাওয়ায় বিশেষ করে মেঘনা তীরবর্তী উপজে'লা মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা, মুলাদী উপজে'লার চর ও নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিব'ন্দি হয়ে পড়েছে ওই তিন উপজে'লার চরাঞ্চলের শতশত মানুষ। তাছাড়া বরিশাল সদর, বাকেরগঞ্জ, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ ও গৌরনদী উপজে'লার বিভিন্ন এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লা’বিত হয়েছে । জে'লা প্রশাসনের মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরূপণ করে উপজে'লা প্রশাসনকে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। তারা ক্ষ’য়ক্ষ’তির পরিমাণ নি’রূপণে কাজ করে যাচ্ছেন।
বুধবার (২৬ মে) দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন উপজে'লা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও ভরা পূর্ণিমা'র সৃষ্ট জোয়ারে জে'লার মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলার ক্ষ’তি বেশি হয়েছে। মেহেন্দিগঞ্জ উপজে'লা নির্বাহী কর্মক'র্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাৎ হোসেন মাসুদ জানান, মেহেন্দিগঞ্জ উপজে'লার শ্রীপুর ইউনিয়নের বহেরাচর আশ্রায়ন প্রকল্পে প্রথম পর্যাযে নির্মিত পাঁচটি ঘর জোয়ারের পানির চাপে ক্ষ’তিগ্র’স্ত হয়েছে। পানিতে জয়নগর, দড়িচর-খাজুরিয়া, বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বাঁ’ধ, রাস্তা, ব্রিজ ও কালভা’র্টের ক্ষ’তি হয়েছে। উলানিয়ার কালিগঞ্জ ঘাটের দুটো পন্টুনের শি’কল ছিঁ’ড়ে গেছে। দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সিকদারহাটে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকটি নদী ভা’ঙনের মুখে পড়েছে। সেখানকার বেশকিছু মাছের ঘের, ইরি ধান ও পানের বরজ জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে।
হিজলা উপজে'লা নির্বাহী কর্মক'র্তা (ইউএনও) বকুল চন্দ্র কবিরাজ জানান, হিজলায় ৩০০ মিটার বাঁধ ধ’সে গেছে।গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের রাস্তার ব্যাপক ক্ষ’তি হয়েছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের। বড়জালিয়া ইউনিয়নের বাউশিয়া, বাহেরচর বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢোকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড়জালিয়ার তিনটি গ্রাম। হরিনাথপুর গ্রামের অসংখ্য মানুষ পানিব’ন্দি’ হয়ে পড়েছেন। মুলাদী উপজে'লা নির্বাহী কর্মক'র্তা (ইউএনও) নূর মোহাম্মাদ হোসাইনী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কাজিরচর ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামের রাস্তা এবং চরকমিশনার থেকে বাহাদুরপুর পর্যন্ত কার্পেটিং রাস্তা ভে’ঙে গেছে। এছাড়া এ পর্যন্ত ছয়টি মাছের খামা'র তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে কয়েক লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
বাবুগঞ্জ উপজে'লা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমা'র প্রভাবে সন্ধ্যা, সুগন্ধা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বৃ’দ্ধি পেয়ে প্রবা’হিত হচ্ছে। এতে নদী তীরবর্তী চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘরব’ন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। উপজে'লার বাহেরচর ক্ষুদ্রকাঠি, মোল্লার হাট, রাজগুরু, নতুনচর, উত্তর রাকুদিয়া, দক্ষিন রাকুদিয়া, মীরগঞ্জ, ছোট মীরগঞ্জ, নোম'র হাট এলাকাসহ বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এদিকে বাকেরগঞ্জ উপজে'লার কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গৌরনদী উপজে'লার আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি বৃ’দ্ধি পাওয়ায় সরিকল ইউনিয়নের মিয়ারচর-কুড়িরচর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উজিরপুর উপজে'লায় পাঁচটি ইউনিয়নে জোয়ারের পানি উঠে ফসল ক্ষ’তিগ্র’স্ত হয়েছে। পৌরসভা'র তিনটি ওয়ার্ডে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে কী'র্তনখোলার পানি বিপৎসীমা অ'তিক্রম করায় বরিশাল সদর উপজে'লার চরবাড়িয়া, শায়েস্তাবাদ, চন্দ্রমোহন ও চরমোনাই ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার পরিবার পানিব'ন্দি হয়েছেন বলে উপজে'লা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে। উপজে'লার বিভিন্ন স্থানে মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। কী'র্তনখোলা তীরবর্তী নগরীর আমানতগঞ্জ, পলা'শপুর, জিয়ানগর এলাকার রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। নদীর সঙ্গে সং’যোগ থাকা ড্রেন দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে নগরীর প্রধান সড়ক সদর রোডের একাংশ। তবে বিকেলে ভাটায় ওইসব এলাকার পানি নামতে শুরু করেছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভা'র মো. আনিসুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশায় আ’ঘা’ত করেছে। তবে এর প্রভাব এখনও রয়েছে। এখনও বরিশালে থেমে থেমে দমকা হাওয়া বইছে। বরিশালে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটার। বুধবার দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে বাতাসের এই গতিবেগ রে’কর্ড করা হয়। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরিশাল আঞ্চলিক প্রধান প্রকৌশলী কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী জাভেদ ইকবাল জানান, বুধবার বিকেল ৩টায় মেঘনার পানি বিপৎসীমা'র লেভেল অ'তিক্রম করে ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তখন বরিশাল নগরীর সংলগ্ন কী'র্তন’খোলার লেভেল ছিল বিপৎসীমা'র চেয়ে ১০ সেন্টিমিটার ওপরে। বিকেল ৩টার পরে নদ-নদীতে ভাটা শুরু হলেও পানি কমছিল খুব ধীরগতিতে।
তিনি আরও জানান, এখন ভরা পূর্ণিমা'র সময়। এ সময় জোয়ার কিছুটা বেশি হয়। তাই দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট বেশি জো’য়ার হতে পারে। এতে রাতের জোয়ারে নদী তীরবর্তী এলাকা আরেকদ’ফা প্লা’বিত হওয়ার আশ’ঙ্কা রয়েছে। প্রকৌশলী জাভেদ ইকবাল বলেন, বরিশালের হিজলা উপজে'লা এক জায়গায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর তারা পেয়েছেন। এছাড়া বাকেরগঞ্জ উপজে'লায় একটি স্থানে বাঁ’ধ ‘ক্ষতিগ্র’স্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাঁ’ধ মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।বরিশাল জে'লা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় আগে থেকেই সব ধরনের সত’র্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। এ কারণে ক্ষয়ক্ষ’তির পরিমাণ কম হয়েছে। ক্ষয়ক্ষ’তির পরিমাণ চূড়ান্তভাবে নির্ধারণের কার্যক্রম অব্যাহ’ত রয়েছে। ঝোড়ো হাওয়া ও জোয়ারের পানিতে জে'লায় কিছু কাঁ’চাঘর ও রাস্তার ক্ষ’তি হয়েছে। ক্ষ’তিগ্র’স্ত মানুষদের সহায়তার জন্য উপজে'লা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।