ত্রাণ চেয়ে ‘৪ তলা ভবন মালিকের' ফোন, ফেঁসে গেলেন ইউপি সদস্য

 

জাতীয় হটলাইন ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চেয়ে শাস্তির মুখোমুখি হওয়া নারায়ণগঞ্জের সেই অসহায় বৃদ্ধ ফরিদ উদ্দিনের ঘটনায় কাশীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আইয়ুব আলীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি।  


বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারি জেলা প্রশাসকের ডাকবাংলোয় গিয়ে প্রতিবেদনটি দাখিল করেন। যদিও আগামীকাল রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল বলে জানা গেছে। 


পাঁচ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে কয়েকশ' ডকুমেন্ট ও ভিডিও ফুটেজ জমা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 


জানা গেছে, প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীকে জরিমানা করা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরাকে সরাসরি দোষী করা না হলেও ভবিষ্যতে ৩৩৩ এর ফোনের ক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুধু স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ওপর নির্ভর না করে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা, মসজিদের ইমাম এবং প্রয়োজনবোধে গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।


তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঘটনার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধির যথাযথভাবে তথ্য দিতে না পারাকেই দায়ী করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সেবা গ্রহীতার আর্থিক সঙ্গতির বিষয়ে যথাযথভাবে তথ্য দিতে পারেননি। 


জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাকে আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাই ভবিষ্যতে ৩৩৩ এর ফোনের ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাকে আরও সতর্ক হওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।


জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। যেহেতু প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়ের অধীন কাশীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বারকে ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, পরবর্তী সময়ে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


তবে এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। তারা প্রশাসনের লোক, তারা যা বলবেন তাই ঠিক।


উল্লেখ্য, অনেকটা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে ৩৩৩-এ ফোন দিয়ে খাদ্য সহায়তা চেয়েছিলেন সেই ‘কথিত ৪ তলা বাড়ির মালিক’ ফরিদ উদ্দিন (৫৭)। অনেকটা ‘নুন আনতে পান্তা’ ফুরানোর মতো অবস্থায় দিন কাটানো ৩৩৩-এ ‘ত্রাণ চাওয়া’ সেই ফরিদ উদ্দিনকেই দিতে হয় ১০০ দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী।


প্রশাসনের নির্দেশনা মতে ১০০ দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সহায়তা করতে গিয়ে নিজের ও ভাইয়ের স্ত্রীদের স্বর্ণালংকার বন্ধক রাখতে হয় তাকে। ঋণের এ টাকা পরিশোধ করার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ছেলে আর নিজের চিকিৎসা খরচ কী করে জোগাড় হবে- সেই চিন্তাই কুরে কুরে খাচ্ছিল বৃদ্ধ ফরিদ উদ্দিনকে।


আর তার জীবনে এ ঘোর অন্ধকার নামার নেপথ্যে ছিলেন ওই এলাকার স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা আইয়ুব আলী। ৩৩৩-এ ফোন করে সাহায্য চাওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন থেকে তদন্তে আসা ব্যক্তিদের তিনিই প্রথম জানিয়েছিলেন, ফরিদ উদ্দিন ওই ৪ তলা বাড়ির মালিক এবং একজন ব্যবসায়ী।

Post a Comment

Previous Post Next Post