সময় তখন ঠিক ক’টা বাজে মনে নেই তবে পড়ন্ত দুপুরের দিকই হবে। হালকা রোদ্দুর, চকমকে আকাশ, ছায়াঘেরা বাগান, একটা দ্বিতল বাড়ী। চারদিকে ঠুকঠুক শব্দ ভেসে আসছে। তাকিয়ে আছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি একটা বাড়ীর দিকে। একটু আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে তাই রাস্তায় হালকা জল কেমন যেন সমুদ্র সৈকত এর মতো চিকচিক করছে। কিন্তু বাতাস টা ঠিক কেমন ভারী। যেমনটা আবেগ ভারী হয়ে বিবেক কে ঢেকে রাখে। আর এজন্যই বুঝি অপরাধ সৃষ্টি হয়। সময়টা ভালো যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছেনা কিন্তু তাও এক অজানা টান যেন তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে জানেনা যে সে কোত্থেকে এসেছে কোথায় যাবে। হয়তো সে বিচরণ করছে কোন এক গভীর অন্ধকারে। কেউ তাকে খুঁজে পায়না এমনকি গুগগুলেও! তার হয়তো প্রিয় রঙ কালো। কিন্তু সামনের দিকে ঠিক তেমনটা নয়। দেখলেই বোঝা যায় যেন কেমন মরিচিকার মতো ঝাকঝিক করছে। আর সবাই মুখিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে বরং বেলকুনীই খুঁজছে। দেখছে কার কি স্বপন। কিন্তু এসব বলছি কেন! বিষয়তো এটা ছিলো না বিষয়টা ছিলো ভিন্নরকম।
সময়টা ২০০৯ সালের আগের কোন এক দিনের এমন একটা পরিবেশে। বেলকুনীতে বসে চা খাচ্ছে সে। ভাবছে সে কিন্তু কি ভাবছে তা কেউ জানে না। তার কিছু কয়েন দরকার। সাধারণ কয়েন নয় । বিট কয়েন। সামনে লেপটপ নিয়ে কি যেন খুঁজছে আর কপাল ঘামছে। মনে হচ্ছিল রোদে বসে আছে। লোহিত সাগরের পাশের কোন এক দেশ থেকে তাকে ডেকে নিতে চায়। এর জন্য পাবে কয়েক হাজার কয়েন। কিন্তু তা কি হয়! সে খুব ভালো কাজ জানেনা। শুধু এতটুকুই পারে যে কিভাবে একটা ছোট্ট টোকায় ট্রিগার চালানো যায়। ব্যস কাজ শেষ। তারপর একাউন্টে কিছু চলে আসবে। এই ভাবনায় বিভোর সে। কিন্তু সে কোথায়। লোকেশন ট্রাকার বলছে নিউইয়র্কের আশেপাশেই। ঠিক কোনো পাঁচ তলা বাসার ছাদে সে। হঠাৎ করে একটা শব্দ হলো
ঠিক কেমন জানি! সে চমকে উঠলো। লেপটপ থেকে হালকা অন্ধকার টাইপের একটা উইন্ডো। কিছু আর.ওয়ানফাইভ নাচানাচি করছে পাশেই। ব্রডব্যান্ড স্পীড অনেক বেশি হলেও সেখানে একটু স্লো কাজ হয়। তার মন চাচ্ছিলো টেইলর সুইফটের “লাভ স্টোরি” গানটা যদি একটু প্লে করা যেত! কিন্তু যে জগতে সে তাতে ভিডিও ওপেন করা প্রায় অসম্ভব। হলো না তার গান শোনা। কিন্তু হঠাৎ সে তাড়াহুড়ো করে একটা কালো ড্রেস পড়ে ড্রয়ার থেকে কয়েকটা গান ঢুকিয়ে নিলো এখানে সেখানে আস্তিনে। চলে গেলো বিমানবন্দর তারপর কোন এক দেশ। তাকে পাঠিয়ে দেয়া হলো একটা অন্ধকার গোডাউনে। সেখানে এমন একজন আছে যে সে গান শুনতে চায় বাঁচতে তে চায় কিন্তু তার কপালে ঠেকানো হলো গান। লোড করা গান। তারপর বিশ্রী কয়েকটা শব্দ। রক্ত। মৃত দেহ। ভাগার। সেখান থেকে নির্দেশ পার্লামেন্টের সামনে যাওয়ার। রাস্তাটা চকচক করছে কিন্তু সে দেখেনা। কালো রঙের কাঁচে মোড়ানো গাড়ি। আবারও গানের খেলা। এবার মারতে হবে একজন পার্লামেন্ট সদস্যকে। খুব সুন্দর না হলেও মোটামুটি। তীক্ষ্ণ নাক। চওড়া ঠাণ্ডা কপাল। দীর্ঘ চুল ঘার অবধি। নিশানা ঠিক কাছাকাছি এলেই একটা বুলেট ধেয়ে চললো মানুষটার দিকে। কিন্তু বিধিবাম। পাশের এক শিশু মারা গেলো। কিন্তু সে ভাবতেই পারছে না যে ঠিক কিভাবে এটা সম্ভব এমনকি তার দাঁড়ায়! ভরকে গেলো সে। একটু সাইড করে গারীটা উধাও। মনে মনে ভাবলো লোকটা বেঁচে গেলো। আমিও গেলাম। যাক এবার একটু ফ্রেশ হয়ে নেবে সুইমিং পুলে। কিন্তু তার মাথায় ঠিক ঐ মিনিটটা খেলা করেই চলল। সে ভাবতে লাগলো লোকটাকে নিয়ে। যেন সে প্রেমে পড়ে গেছে। নাকি শিশুটির মায়া। দুটোই তাকে ঘামাচ্ছে। ক্লান্ত করে দিচ্ছে নিউরনকে। কিন্তু ঠিক ঐ এক মিনিটে আসলেই কি ঘটেছিল!
এখানে যা বলছি তা হলো একটি অন্ধকার জগতকে নিয়ে। যেখানে সব মাল্টি-টেলেন্ট মানুষেরা বাস করে। এখানে একটু গান কিন্তু গেয়ে নেওয়া যায়! কি বলেন...... তাইলে চলেন একটু জলের গান গাই!
আন্ধার রাইতে চান্দের আলো
দেখলাম না নজরে।
এমন ধারার জনম আমার
মানুষ হইয়ারে...
গান শ্যাষ......
তাইলে কি হয়েছিল এই এক মিনিটে!
হাজার তিনেক গড ফাদারের এক সাথে অস্ত্র কেনা। পঁচিশ হাজার মানুষের নেশা জাতিও দ্রব্য কেনা। পাঁচশত হ্যাকিং ট্রিকস্ বিক্রি। পঞ্চাশ টি মৃত দেহের ছবি আপলোড। নিউক্লিয়ার বোমা বানানোর ত্রিশটি স্বয়ংক্রিয় বিক্রিয়ার প্রোডাক্ট। চাইল্ড পর্ণ ভিডিও লিঙ্ক অগণিত। বায়োলজিক্যাল ওয়েপন কিছু। শেষ মুক্তই পাওয়া মুভির পাইরেসি করা কপির লিঙ্ক। আরো অনেক কিছু যা একজনকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। যার সব হয়েছে ডার্ক ওয়েবে। এটা আসলে কিছুই না জাস্ট ডিপ ওয়েবের একটা অংশ। যেখানে সব অনৈতিক ঘটনা হয়। কিছু নৈতিকও হয়। যেটা আপনি কখনোই সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে খুঁজে পাবেন না। কিংবা ট্র্যাক করতে পারবেন না কারও গতিবিধি। ঢুকতেও পাড়বেন না সাধারণ ব্রাউজার দিয়ে। টর নামের ব্রাউজার দড়কার পড়বে ঢোকার জন্য। ডোমেইন ও বেশ মজার নামের। .পেঁয়াজ! আরে নাহ ভাই সেটা এই পেঁয়াজ না এটা .onion নামেই কাজ করে। সেখানে ওয়েব এড্রেস গুলিও কেমন অদ্ভুত!
যেমনঃ svfjdawfgdvhfffhdvhdfbldj5427434bkjvdfvdbhj.onion। বলা হয় যে আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি তার চেয়েও ৫০০ গুন বেশি তথ্য আছে ডার্ক ওয়েবে। মাথা ঘুরাচ্ছে নিশ্চয়ই আপনার। যে আপনি কত্ত কিছু জানেন না! আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি সব মিলিয়ে তা মাত্র ১০%! আবারো নিশ্চয়ই ক্রাশ খাইলেন। কিন্তু এর অপরাধের দিকটা বেশি হওয়ায় এফবিআই সহ সব ধরনের ইন্টারন্যাশন ইন্টেলিজেনসি এতে ঘাসফড়িং এর মতো হাজার হাজার চোখ দিয়ে রাখে। ধরা খাইলে খবর আছে!
কিন্তু উপড়ে উল্লেখিত চরিত্রের কি হলো। সে কি ছেলেটাকে পাইলো! নাকি অন্য কিছু! ফিরে এসে সে সুইমিং পুলে যেই নামতে গেছে দেখে যে বিশাল মাপের একজন হ্যাকার তার বডি ডিকোড করছে। খুঁজছে তথ্য প্রতিটি রক্ত কণায়। কিন্তু তাকে টাচ না করেই কিভাবে সম্ভব! হ্যা সম্ভব মানতেন যদি “Ghost in the Shell” মুভির যুগে বাস করতেন। এবার আচমকা হ্যাকার যখন তার চোখে ক্যাবল লাগাতে গেলো সাথে সাথেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। চোখ ঘষে চিন্তা করল যে এই এক মিনিটের প্রেম তার ভেস্তে গেলো! আর হতাশ হয়ে ভাবলো “এ কেমন বিচার”!!!