MrJazsohanisharma

রহস্যময় দুই শূন্যের কথন | জিয়াউল হক


 শূন্য (Zero)। শূন্যের দুটি জগত। একটি গাণিতিক শূন্য অপরটি স্থানিক শূন্য। স্থানিক শূন্য থেকে দুই রকম শূন্যের ধারনা পাই। যথা: আংশিক শূন্য, শূন্য। আংশিক শূন্য বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম উপায় তৈরি করতে পেরেছে। সহজ ভাষায় সহজ উদাহরণ দিলে মহাশূন্য হচ্ছে আংশিক শূন্য। মহাশূন্য মূলত অঙ্গীভূতভাবে ইথার নামক অনমনীয় অবিনশ্বর উপাদান দ্বারা পূর্ণ বলে মনে করা হয়। 


কোনকিছু না থাকার পরিবর্তে কেন এত কিছু? কেন মহাবিশ্ব? কেন আমি? এই প্রশ্নে কোনকিছু না থাকা বলতে যেটা বুঝায় সেটা কেই বলেছি আমি শুধুমাত্র শূন্য। প্রাচীনকাল থেকেই শূন্য নিয়ে মানুষের নানান জিজ্ঞাসা। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকরা শূন্যস্থানকে অশ্বিকার করত। এরিস্টটল বিশ্বাস করত শূন্যস্থান প্রাকৃতিক ভাবে সম্ভব না। কারন কোন স্থানের ঘনত্বের কারনে কিছু সরালে আশে পাশের বস্তু এসে ঐ স্থান পূরণ করে, ফলে শূন্যস্থানে পৌঁছান যাবেনা। এরিস্টটল যা বললেন তা অশূন্যের মধ্য শূন্য করার চেষ্টা। একটা ফুটবলের ভিতর থেকে কোন উপায় সব বাতাস বের করে দেই আর ফুটবলটি যাতে সংকুচিত না হয় সেই ব্যবস্থা করি তাতে কি বলের ভিতর শূন্যতা হয়ে গেল? বরং স্থান নামক একটা ব্যাপার রয়ে গেল। স্থান ছাড়া কি কিছু থাকতে পারে? আমরা সেসব বিষয় কি ধারনা পেতে পারি? আসলে আমরা যা কিছু চিন্তা করতে পারি তা সব স্থানের মধ্য। আপনি ভাবুন যে যদি মহাবিশ্ব না থাকত, তাহলে কি থাকত? প্রশ্নটি করা মাত্র আপনার মাথায় আসবে কোথায় থাকবে সেটা। কি থাকবে সেটা পরে। কোথায় থাকবে এই চিন্তার কারন হল আমরা স্থান ছাড়া কিছু থাকতে পারে সেরকম কল্পনা করতে পারি না। বিশ্বাস না হলে আপনি চেষ্টা করুন। আমাদের ইন্দ্রিয় ব্যবস্থা স্থানিক বোধ যোগ্য। মধ্যযুগে মধ্যপূর্ব বিশ্বে পদার্থবিদ এবং ইসলামিক পন্ডিত আল-ফারাবি শূন্যস্থানের অস্তিত্ব নিয়ে কিছু পরীক্ষা করেন। যেখানে পানিতে হাতেধরা পিকচারির ডাঁটা পরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন বায়ু বর্ধিত হয়ে খালি আয়তন পূরণ করতে পারে এবং সে সুপারিশ করেন যে আদর্শ শূন্যস্থানের ধারনা অনিশ্চিত। যদিও নাদের আল বিযি অনুসারে পদার্থবিদ হাসান ইবনে আল-হাইসাম এবং মুতাজিলা কানাশ এরিস্টটল ও ফারাবির সাথে একমত পোষণ করেনি। তারা শূন্যস্থানের অস্তিত্বকে সমর্থন করেন। আমরা যে শূন্যস্থান বলি সেটাকে কেবল স্থান বলা যায়। যদি আমি বলি আমার একটা চায়ের ফ্লাক্স আছে তা থেকে বুঝায় না যে চা ভর্তি ফ্লাক্স। চায়ের ফ্লাক্স বলতে বুঝায় খালি ফ্লাক্স। তেমনি শূন্যস্থান কে শুধু স্থান বলা যায়। স্থান কি? আমি স্থানে অবস্থান করে লিখছি অথচ স্থান কি তাই জানি না! এরিস্টটল ও ফারাবি বলেছে আমরা শূন্যস্থানে পৌঁছাতে পারব না অর্থাৎ স্থানে পৌঁছাতে পারব না। তাহলে কি আমি স্থানের বাইরে! আসলে সমস্যা হল স্থানে আমি একা না স্থানে আছে জানা অজানা অনেক অনু, পরমাণু, কনা, ফোটন ইত্যাদি। আমরা যদি এই জানা অজানাকে ভালভাবে জানতে পারি এবং স্থান থেকে আলাদা করতে পারি তবেই আমরা শূন্যস্থানের রহস্য উদঘাটন করতে পারব। সতের শতকের আগ পর্যন্ত শূন্যস্থান নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্কিত চলেছে। এই সময়টায় অধিকাংশ দার্শনিক শূন্যস্থানকে অস্বীকার করেছে। সতের শতকের পর বিজ্ঞানীরা আংশিক শূন্যস্থানের সাংখিক পরিমাপের চেষ্টা শুরু করেন। ১৬৪৩ সালে টরিসিলির পারদ ব্যারোমিটার এবং ব্রেইজ প্যাসকেলের পরীক্ষা আংশিক শূন্যস্থানের পরিমাপয়ের ধারনা দেয়। শূন্যেকে জানতে হলে প্রথমে আংশিক শূন্য সম্পর্কে ভালভাবে জানতে হবে। তাই বিজ্ঞানীরা কৃত্রিমভাবে আংশিক শূন্যস্থান তৈরি করে। এর থেকে জানতে পারল যে কিছু সংখ্যাক কনা এই শূন্যের প্যারায় রয়েছে। যা বিজ্ঞানীদের পরবর্তীতে আরো গবেষণার আগ্রহ জাগায়। প্রথম দিকে আমি ইথার সম্পর্কে বলেছিলাম। ধারনা করা হয় ইথারীয় মাধ্যমে আলো চলাচল করে। আলো আমাদের মত শূন্যস্থানে অবস্থান করতে পারেনা। এত খনের আলোচনায় দেখলাম যে শূন্যস্থান এখনও অনিশ্চিত।


এবার কোয়ান্টাম বলবিদ্যা দিয়ে আলোচনা করা যাক। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মাধ্যমে বিচার করলে শূন্যস্থান হল সর্বনিম্ন সম্ভাব্য শক্তির একটা অবস্থা। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বলে কথা সেতো আর কোন কিছুকে একেবারে অসম্ভব বলে বসে থাকতে পারে না। তাই কোয়ান্টাম তড়িৎ-গতিবিদ্যা শূন্যস্থানকে কিউইডি শূন্যস্থান এবং কোয়ান্টাম Chromodynamics এ শূন্যস্থানকে কিউসিডি শূন্যস্থান বলে নির্দেশ করে। কিউইডি শূন্যস্থান বলতে বুঝায় পদার্থকনিকা ও ফোটনহীন অবস্থা। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা আমাদের একেবারে ফিরিয়ে না দিলেও তেমন কিছু দিতে পারেনি। যার কারন কিউইডি শূন্যস্থান পরীক্ষণীয় ভাবে কখনো সম্ভব না। সম্ভব না হওয়ার কারন হল কোনভাবে যদি আপনি একটা আয়তন হতে সকল পদার্থকনা বের করে দেন তারপরও বস্তুর কৃষ্ণবস্তু-বিকিরণ বন্ধ হবে না। যাই হোক এটাই বাস্তবযোগ্য একটা আদর্শ মডেল।




এখনও কিন্তু সেই "সব কিছু না থাকার পরিবর্তে কেন এত কিছু?" প্রশ্নের সব কিছু না থাকা বলতে যেই শূন্য বুঝায় সেটা এখনও পেলাম না। মহাবিশ্ব যেহেতু আছে সেহেতু আর না থাকার উপায় নেই। কিন্তু একটা উপায় আছে আমরা মহাবিশ্ব থেকে বেরিয়ে যাই তাহলেইতো হয়। মহাবিশ্ব থেকে বের হতে হলে আমরা একটা সরলরেখা বরাবর অনন্তকাল সামনে আগাতে পারি তাহলেই একদিন মহাবিশ্ব থেকে বাইরে বের হতে পারব। কিন্তু আর একটা বড় ঝামেলা আছে! আইনস্টাইন যে তার আপেক্ষিকতার তত্ত্বে বলেছে স্পেসটা খুব অদ্ভুত ভাবে বাঁকানো / মোড়ান। তাই আমরা সরলরেখা ধরে চললেও মহাবিশ্বর বাইরে যেতে পারব না। দেখা যাবে যে স্থান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম এক সময় আবার সেই স্থানে ফিরে আসব।




স্থানিক শূন্য নিয়ে বিষদ আলোচনা করলাম এবার গাণিতিক শূন্য (০) নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করি। গাণিতিক শূন্যের সাথে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। প্রাথমিক লেভেল থেকেই শূন্য সম্পর্কে সবাই জানে। বর্তমান ধারনা অনুসারে শূন্য (০) একটা জোড় পূর্ণসংখ্যা এবং অঙ্ক। স্থানিক শূন্যের মত গাণিতিক শূন্য কিছুমাত্রয় কম রহস্যের নয়। স্থানিক শূন্য সম্পর্কে আমাদের যেমন ভালো ধারনা নাই গাণিতিক শূন্যের (০) সম্পর্কেও তেমন ধারনা নেই। শূন্য দিয়ে কোনো সংখ্যাকে ভাগ দিলে অসংজ্ঞায়িত হয় এটা সবাই জানি। কেন অসংজ্ঞায়িত হয় সেটা কি ভেবেছেন? আসলে শূন্য দিয়ে কিছুকে গনিতবিদরা ভাগ করতেই পারেনি ভাগ করলে কি হবে সেটাও জানতে পারেনি। তাই গনিতবিদরা শূন্যের খুব কাছাকাছি সংখ্যা দিয়ে ভাগ দিয়ে অসংজ্ঞায়িত হয় সেটা নির্ধান করেছেন। একটা সংখ্যা তখন সংজ্ঞায়িত হবে যখন তার কেবল একটাই মান থাকবে। কিন্তু শূন্যের কাছাকাছি সংখ্যা নিতে হলে দুটি সংখ্যা নিতে হবে একটা প্লাস (+) শূন্যের কাছাকাছি সংখ্যা এবং অপরটি মাইনাস (-) শূন্যের কাছাকাছি সংখ্যা। আর এই দুইটা দিয়ে কিছুকে ভাগ দিলে দুইটা মান আসবে একটা প্লাস ইনফিনিটি এবং অপরটা মাইনাস ইনফিনিটি। দুইটা মানের জন্য ভাগফল হবে অসংজ্ঞায়িত। ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন শূন্য দিয়ে ভাগ করতে পারিনি করেছি শূন্যের কাছাকাছি সংখ্যা দিয়ে। ওই যে আংশিক শূন্য মনে আছে?




তথ্যসংগ্রহ : 


Post a Comment

Previous Post Next Post