মেধাবী একটি ছাত্রী ঝড়ে গেল অকালেই। যদিও ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। তার পরেও এমন একটি ঘটনা ছুয়ে গেছে সব মানুষের মনে। দাগ কেটে গেছে সবার মনের মধ্যে। জানা যায়
পোকার কা’/ম’/ড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এক তরুণী। তবে শারীরিক অসুস্থতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ভারতের কেরালার সান্দ্রা আন জাইসন নামের ওই তরুণী পরিবারের সঙ্গে বাস করতেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাতে।
গলফ নিউজর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসেই শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়া সান্দ্রা শারজায় কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা (সিবিএসই) পরীক্ষায় (দ্বাদশ শ্রেণি) সর্বোচ্চ গ্রেড পান।
এর আগে, ২০১৪ সালে একটি পোকা সান্দ্রাকে কামড় দেয়। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানা যায় তিনি বিরল রোগ হেনোচ-শোনলিন পুরপুরায় (এইচএসপি) আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কোন পোকা কা’/ম’/ড় দিয়েছিল, তা জানা যায়নি। রক্তের ক্ষুদ্র কণিকার প্রদাহের এই রোগ ধীরে ধীরে সান্দ্রার কিডনি দুটো অকেজো করে দেয়।
২০১৮ সালে তার কিডনির কার্যক্ষমতার ৭০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। চলতি সেপ্টেম্বরের শেষে তার কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা ছিল। এ জন্য তার প্রবাসী বাবা-মা সন্তানকে নিয়ে কেরালায় ফিরে যান। কিন্তু পরপর দুইবার সাময়িক সময়ের জন্য তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ৭ সেপ্টেম্বর সান্দ্রা মারা যান। তবে মা’/রা যাওয়ার আগে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার মতো কীর্তি রেখে গেছেন তিনি।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে দ্বাদশ শ্রেণির কোনো ক্লাসে অংশ নিতে পারেননি সান্দ্রা। এমনকি চূড়ান্ত পরীক্ষাও দিতে হয়েছে অন্য লেখকের সাহায্য নিয়ে। তারপরেও ৭৫ শতাংশ নম্বর তুলে তিনি কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বরধারী হন। নিজের পছন্দের বিষয় মনোবিজ্ঞানে পান ৮৫ শতাংশ নম্বর। শৈশবে বিমানবালা হতে চাওয়া মেয়েটি শেষ পর্যন্ত হতে চেয়েছিলেন মনোবিদ। নিজের রোগের কারণেই তার এই লক্ষ্য পরিবর্তন বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
সান্দ্রার প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার স্কুলের শিক্ষকেরা। শারজা ইন্ডিয়ান স্কুলের অধ্যক্ষ প্রমোদ মহাজন বলেন, ’সান্দ্রা একজন যোদ্ধা ছিলেন। এমন অসুখে থাকা মেয়েটি শেষ পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছে। পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি চেয়ে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তখন সান্দ্রা বলেছিল, তিনি হারবেন না। তার নিজের লেখার মতো অবস্থা ছিল না। এ জন্য একজন লেখক দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এ জন্য বিশেষ অনুমতি নিতে হয়েছিল। সান্দ্রা তার কথা রেখেছে। ক্লাস না করেও ৭৫ শতাংশ নম্বর অর্জন করেছে সে। আর নিজের আগ্রহের বিষয় মনোবিজ্ঞানে এই স্কোর ছিল ৮৫।
এ দিকে এই ঘটনা প্রকাশ পাবার পর থেকেই বেশ শোকাহত হয়ে পড়েন নেটিজনেরা। তারা মেধামী এই মেয়ের অকাল প্রয়াণে বেশ শোক প্রকাশ করেন। অনেকেই তাকে পরপারের ভালো থাকার আশির্বাদ দিয়েছেন। এ দিকে মেয়েটির শিক্ষক-শিক্ষীরাও বেশ ভেঙে পড়েছেন মেয়েটির এই অকাল প্রয়াণে।