মির্জা আব্বাসকে নিয়ে বিএনপিতে ‘দলাদলি’

 

এম ইলিয়াস আলী ‘গুম’ হওয়ার ব্যাপারে বিস্ফোরক মন্তব্যের জন্য দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএনপি। দলের নেতারা ওই গুমের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সে ব্যাপারেই মূলত তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে।


শনিবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের বিষয়টি জানতে চাইতে পারে হাইকমান্ড।


তবে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির রাজনীতিতে ‘বিশ্বস্ত’ বলে পরিচিত নেতা মির্জা আব্বাসের বিরোধী একটি গ্রুপ এই বিষয়টিকে ‘ইস্যু’ বানাচ্ছে। একটি ভার্চুয়াল সভায় স্বভাবসুলভ বক্তব্য দেন আব্বাস। বিষয়টি নিয়ে যতটা না জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনা আছে, তার চাইতেও বেশি ঘাঁটছেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির দুই ‘নবীন’ সদস্য।


দলীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে মির্জা আব্বাসকে চিঠি দেন। তবে তাকে শোকজ করার যে গুজব তা সঠিক নয়। জানা গেছে, মির্জা আব্বাসকে দেওয়া ওই চিঠিতে তার বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়, ইলিয়াস আলী গুম হয়েছেন ৯ বছর হয়েছে। এই সময়ে তাকে গুমের বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দেশে ও বহির্বিশ্বে জনমত গড়ে ওঠেছে। এ ব্যাপারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। 


চিঠিতে মির্জা আব্বাসকে বলা হয়, আপনার বক্তব্য এই জনমতকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দলের নেতাকর্মীরা আপনার বক্তব্যের ব্যাপারে আপনার কাছে ব্যাখ্যা প্রত্যাশা করছে যে আপনি কী বলতে চেয়েছিলেন।


শনিবার দলের ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ধরে নিলাম আওয়ামী লীগ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেনি। তাহলে গুমটা কে করল? এই সরকারের কাছে এটা আমি জানতে চাই। ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার আগের রাতে দলের কর্যালয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে মারাত্মক বাগবিতণ্ডা করেন এমন তথ্য দিয়ে মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীর গুমের পেছনে দলের অভ্যন্তরে লুকায়িত ‘বদমায়েশগুলো’কে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন।


তার এমন বক্তব্যের পর দলের একটি অংশ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। যদিও মির্জা আব্বাস এক দিন পর নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে দাবি করেন, তার সহজ-সরল মনের সরল উক্তিগুলো বিকৃত করে গণমাধ্যমগুলো যার যেখান থেকে প্রয়োজন কেটেছিঁড়ে ইচ্ছামতো লাগিয়ে দিয়েছে। 


এদিকে আব্বাসের বক্তব্য নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। স্থায়ী কমিটির তিন সিনিয়র সদস্য বিষয়টি মির্জা আব্বাসের স্বভাবসুলভ বক্তব্যের বহিঃপ্রকাশ বলে মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, এটি ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। তাদের বক্তব্যে তারেক রহমানও আশ্বস্ত হয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি জিইয়ে রাখেন স্থায়ী কমিটির দুই নবীন সদস্য। দলে তারা এখন অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে পরিচিত।


দলের নেতাকর্মীদের অধিকাংশই মনে করেন, বিএনপির রাজনীতিতে আব্বাসের এমন বক্তব্য নতুন নয়। দলের ত্যাগী নেতা হিসেবে তার ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই। বিএনপির রাজনীতিতে ইলিয়াস আলী তার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার ব্যাপারে তিনি সব সময় দুর্বল। তার ঘটনায় তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে ওই বক্তব্য দিয়েছেন। 


তাদের মতে, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার সত্যতা নিশ্চিতে তার চলাফেরা বা কর্মকাণ্ড এক বা দুই মাস পর্যবেক্ষণ করতে পারত। কারণ দলের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করে থাকলে তা এ সময়ের কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পেত। তাড়াহুড়ো করে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। এ রকম মির্জা আব্বাস দলে আরেকজন তৈরি করতে পারবে না। 


তবে দলের অপর একটি অংশ মনে করে, ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার এত বছর পর মির্জা আব্বাসের এমন বক্তব্য দেওয়া ঠিক হয়নি। এই বক্তব্যের ফলে গুমের বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দেশে ও বহির্বিশ্বে যে জনমত গড়ে ওঠেছে তা একটু হলেও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। চিঠি দিয়ে দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post