হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের সহযোগিতা নিয়ে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলেন। আর এসব করতে মামুনুলকে অর্থের যোগান দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত ও পাকিস্তান।
এভাবেই জানানো হয় ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে ।
ঢাকা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটি করেন দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী।
শুক্রবার দৈনিকটির অনলাইনে প্রকাশ পাওয়া প্রতিবেদনটিতে বলা হয় যে, সুবর্ণজয়ন্তী ঘিরে হেফাজত যে সহিংসতা চালিয়েছে, তা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে শলাপরামর্শের ভিত্তিতেই হয়েছে। আর তহবিল এসেছে পাকিস্তান থেকে। আফগানিস্তানে (তালেবানদের পক্ষ হয়ে) যুদ্ধ করা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জিহাদিদের সঙ্গেও মামুনুলের যোগাযোগ রয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুলই এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হককে ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে বেলা ১২টার দিকে গ্রেফতার করা হয়।পরের দিন সোমবার তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এতে তার ব্যক্তিগত জীবনেও অসঙ্গতি পাওয়া যায়। তিনি তিন বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে ছাড়া অন্য দুটির নিবন্ধিত কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। অন্য দুই বিয়ের কাগজ তার কাছে নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয় যে, পুলিশের কাছে কিছু নথিপত্র এসেছে। এ অনুযায়ী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা যাওয়ার এক মাস আগেই সহিংসতার ছক কষা হয়। সে অনুসারে উপাসনালয়, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দেওয়া হয়। সহিংসতার এ অর্থ আসে পাকিস্তান থেকে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে প্রবাসী কিছু বাংলাদেশি সরকারবিরোধী সমাবেশ ও কর্মকাণ্ডের জন্য নগদ অর্থ পাঠিয়েছিল।
ইকোনমিক টাইমস তাদের প্রতিবেদনে দাবি করে, হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী নিয়মিতই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে লন্ডনে থাকা খালেদা জিয়ার ছেলে (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন) তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন বাবুনগরী ও মামুনুল। সরকারবিরোধী বিক্ষোভ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা ছিল তারেকের।
সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে হেফাজতের ২০১৩ সালের তাণ্ডবের ঘটনায় খালেদা জিয়াসহ অন্যদের আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করা যায় কি-না, সে বিষয়ে তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা।
এদিকে মামুনুলকে রিমান্ডের নেওয়ার পরের দিন মঙ্গলবার প্রেস বিফ্রিং করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন-অর-রশিদ।
তিনি বলেন, রিমান্ডে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক। তিনি জানিয়েছেন, তিনি কওমি মাদরাসার কোমলমতি ছাত্রদের উসকানি দিয়ে মাঠে নামিয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতার আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা। হেফাজতের নেতাকর্মীদের উসকানি দিতেন মামুনুল।
মো. হারুন-অর-রশিদ বলতেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে হেফাজতের সমর্থন ছাড়া কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারবে না।