বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন করলে বিরক্ত হন। অথচ ট্রোলড হতে তাঁর দারুণ মজা লাগে! তাঁকে নিয়ে যত মিম হয়েছে, নিজের সংগ্রহে রেখেছেন। কথা হচ্ছে,‘মোহর’ ধারাবাহিকের নামভূমিকার অভিনেত্রী সোনামণি সাহার।
সহ-শিল্পী প্রতীক সেনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কারণেই নাকি বিবাহবিভ্রাট। সত্যিটা কী? ‘‘প্রতীক আমার ইন্ডাস্ট্রির বন্ধু। ‘দেবী চৌধুরাণীতে’ও আমার সহ-শিল্পী রাহুলের (মজুমদার) সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু প্রতীকের সঙ্গে সম্পর্কটা একটু আলাদা। ও হচ্ছে সোনামণির টিচার। ওর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি,’’ খোলসা করলেন নায়িকা।
২০১৫ সালে কোরিয়োগ্রাফার সুব্রত রায়ের সঙ্গে বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যেই বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? প্রশ্নটা শেষ হতে না হতেই অভিনেত্রীর শর্ত, ‘‘এই বিষয়ে কথা বলতে চাই না, ব্যক্তিগত জীবন দূরে রাখতে চাই। ওই পর্ব ভুলতে চাই।’’ পারিবারিক সমস্যা থেকে নিজেকে বার করে আনা সোনামণির পক্ষে কঠিন ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘সমস্যা তৈরি হয়েছিল বলেই সরে এসেছি। কিন্তু তার জন্য মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছি, তা নয়।’’ ট্রোলিংকে ভয় পান? ‘‘ না, বেশ মজা লাগে। আমাকে আর প্রতীককে নিয়ে এত লোকের আগ্রহ দেখে ভালই লাগে। নিজেদের মধ্যেও এটা নিয়ে মজা করি। ট্রোল কালেক্ট করার শখ রয়েছে,’’ বললেন তিনি। সঙ্গে জুড়লেন, ‘‘কিন্তু নিজে থেকে সব কিছু সামাজিক মাধ্যমে মেলে ধরা পছন্দ নয়। কী খেলাম, কী পরলাম ব্যক্তিগতই থাক।’’ অবসর সময়ে একা থাকতেই পছন্দ করেন। রয়েছে নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখা। সময় পেলে রোড ট্রিপে শিলং যেতে চান।
সোনামণি প্রথম পরিচিতি পান র্যাম্প থেকে। ছোট পর্দায় ‘দেবী চৌধুরাণী’ তাঁর প্রথম কাজ। দেবী চৌধুরাণী ও মোহর চরিত্র দু’টির মধ্যে তফাত থাকলেও মিল খুঁজে পান অভিনেত্রী, “আলাদা হলেও একটা মিল পাই। দেবী চৌধুরাণীর মতো মোহরও প্রতিবাদী।’’ ছোট থেকে সরকারি চাকরি করার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর গ্ল্যামার জগতে আসা নিতান্তই কাকতালীয়। ১৭ বছর বয়সে মালদা থেকে তাঁর কলকাতা চলে আসায় পরিবারের অসম্মতি ছিল। ‘‘বাবা-মায়ের প্রবল আপত্তি ছিল। কিন্তু চার ভাইবোনের মধ্যে ছোড়দা বাবা-মাকে বুঝিয়ে রাজি করান। ভাল হাইট থাকার কারণে মডেলিংয়ে সুযোগটা পেয়ে যাই। সাফল্যও আসে। কিন্তু ‘দেবী চৌধুরাণী’তে অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পরে মনে হয়েছিল, ‘ওরে বাবা, অভিনয়!’ এখনও ফ্লোরে ঢুকলে সেই ভয় গ্রাস করে,’’ স্মৃতিমেদুর সোনামণি।
তবে সাফল্য মাথা ঘুরিয়ে দেয়নি তাঁর। শিকড় আঁকড়ে থাকার কথা শোনালেন নায়িকা, ‘‘পাঁচ বছরে আমার মধ্যে কোনও পরিবর্তন আসেনি। এখনও রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে ভালবাসি। বড় হয়েছি সাধারণ পরিবারে। মাটির কাছাকাছি থাকতে চাই।’’
গ্ল্যামার জগতে থেকেও পার্টি-ক্লাবিংয়ের চেয়ে শতহস্ত দূরে থাকেন সোনামণি। ‘‘অভিনয়ের বাইরে দুনিয়াটাকে সে ভাবে দেখাই হয়নি। ক্লাবিং করি না। আমার সে ভাবে কোনও বন্ধু নেই। শুটিংশেষে পার্টি করার প্রশ্নই আসে না। কখনও ইচ্ছেও হয়নি। তবে ইন্ডাস্ট্রিতে আসার আগে নানা কথা শুনেছিলাম। এখনও অবধি তেমন বিরূপ অভিজ্ঞতা হয়নি’’ বক্তব্য তাঁর।
সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা বলে কারও মনের কথা ধরতে পারেন তিনি। আবার কোনও বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত ভেবে মানসিক ক্লান্তিতেও ভোগেন। ‘‘পর্দার মোহরকে দেখে আরও শক্ত হয়েছি। নিজের জীবন দর্শনকে বদলাতে সাহায্য করেছে মোহর,’’ স্পষ্ট জবাব তাঁর।
বড় পর্দায় কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে অভিনেত্রীর। ছোটবেলায় শেখা গানের চর্চায় যে ছেদ পড়েছিল, তা-ও ফের শুরু করতে চান। প্রেম-বিয়েতে ধাক্কা এই আবেগের উপরে ভরসা হারাতে বাধ্য করেনি সোনামণিকে। বরং এখনও তিনি স্বপ্ন দেখেন এমন এক রাজপুত্রের যে, তাঁকে খুব ভালবাসবে, তাঁকে বুঝবে, মুছে দেবে অতীতের গ্লানি।