\
এলার্জি অপরিচিত শব্দ নয়, কম বেশি আমাদের সবারই এলার্জি সমস্যা রয়েছে। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে এলার্জির মতো রোগের সৃষ্টি হয়। যা থেকে সর্দি কাশি, শ্বাস কষ্টের মতো রোগও হয়ে থাকে।
আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধে ইমিউন সিস্টেম তৈরি করে রেখেছেন। যার ফলে সব সময়ই ক্ষতিকর বস্তুকে (পরজীবী, ছত্রাক, ভাইরাস, এবং ব্যাকটেরিয়া) প্রতিরোধের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করে। কখনো কখনো আমাদের শরীর সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন অনেক ধরনের বস্তুকেও ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে অ্যালার্জি বলা হয়।
আমরা শীতকালের শেষ দিকে এলার্জির প্রকোপটা বেশি দেখতে পায় কারণ তখন মাটি থাকে শুষ্ক ফলে ধুলাবালি বাতাসে বেশি উড়তে থাকে।
সচারাচর যে সকল জিনিস এলার্জির সৃষ্টি করেঃ
১.মাইট (এমন কিছু যা পুরানো কাপড়ে জন্মায়)
২. কুকুর, বিড়ালের পশম, প্রস্রাব ও লালা
৩. ফুলের রেণু
৪. ঘরের ধূলাবালি
৫. তুলা বা পাটের আঁশ
৬. পোকা মাকড়ের হুল
৭. স্যাঁতস্যাঁতে কার্পেট
৮. সিগারেটের ধোঁয়া
৯. ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া
১০. বিশেষ কোন খাবার (যেমন গরুর মাংস, ইলিশ মাছ ইত্যাদি)
১১. হরমোন ইনজেকশন
১২. চুলের কলপ
১৩. রঙ
১৪. স্বভাব ইত্যাদি
তবে এগুলো যে সবার এলার্জি সৃষ্টি করবে তা নয়। বরং ব্যক্তি বিশেষ এ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
এলার্জিতে যে সকল রোগ হয়ে থাকেঃ
আর্টিকেরিয়া: এর ফলে ত্বকে লালচে ফোলা ফোলা হয় এবং ভীষণ চুলকায়। ত্বকের গভীর স্তরে হলে মুখ, হাত-পা ফুলে যেতে পারে। আর্টিকেরিয়ার ফলে সৃষ্টি খোলা অংশগুলো মাত্র কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী থাকে। তবে কখনও কখনও বার বার হয়। যে কোনো বয়সে আর্টিকেরিয়া হতে পারে। তবে স্বল্পস্থায়ী আর্টিকেরিয়া শিশুদের মধ্যে এবং দীর্ঘস্থায়ী আর্টিকেরিয়া বড়দের মধ্যে দেখা যায়।
অ্যালার্জি জনিত সর্দি বা ‘অ্যালার্জিক রাইনাইটিস’: এর উপসর্গ হচ্ছে অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কারও কারও চোখ দিয়েও পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়।
‘অ্যালার্জিক রাইনাটিস’ দুই ধরনের।
সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাটিস: বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে একে সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়।
পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস: সারা বছর ধরে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে একে পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়।
লক্ষণ ও উপসর্গ
সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস:
১.ঘন ঘন হাঁচি।
২. নাক দিয়ে পানি পড়া।
৩. নাসারন্ধ্র বন্ধ হয়ে যাওয়া।
৪. চোখ দিয়ে পানি পড়া।
৫. চোখে তীব্র ব্যথা অনুভব করা।
পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস:
পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের উপসর্গগুলো সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের মতো। তবে এক্ষেত্রে উপসর্গগুলোর তীব্রতা কম হয় এবং স্থায়িত্ব কাল বেশি হয়।
অ্যাজমা বা হাঁপানি:
এর উপসর্গ হচ্ছে কাশি, ঘন ঘন শ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া বা বুকে চাপ লাগা, শিশুদের ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যেই ঠাণ্ডা লাগা।
অ্যাজমার প্রধান প্রধান উপসর্গ বা লক্ষণগুলো হল:
১. বুকের ভেতর বাঁশির মতো সাঁই সাঁই আওয়াজ।
২. শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট।
৩. দম খাটো অর্থাৎ ফুসফুস ভরে দম নিতে না পারা। ৪. ঘন ঘন কাশি।
৫. বুকে আঁটসাঁট বা দম বন্ধ ভাব।
৬. রাতে ঘুম থেকে ওঠে বসে থাকা।
এলার্জির চিকিৎসাঃ
এলার্জির প্রাথমিক ও তাৎক্ষণিক চিকিৎসা হিসেবে ওরাল, টপিকাল অথবা ইনজেক্টেবল এন্টিহিসটামিন বা অনেক সময় স্টেরয়েড দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসার পূর্বে উপযুক্ত কারণ খুজে বের করে চিকিৎসা নেয়া উচিত। তাছাড়া
এলারজেন পরিহার:
যখন এলার্জির সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়, তখন তা পরিহার করে চললেই সহজ উপায়ে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ওষুধ প্রয়োগ:
অ্যালার্জি ভেদে ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এলার্জি ভ্যাক্সিন বা ইমুনোথেরাপী:
অ্যালার্জি হয় এরকম জিনিস থেকে এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিনও অ্যালার্জিজনিত রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি।
এ পদ্ধতি ব্যবহারে কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার অনেক কমে যায়। ফলে কর্টিকোস্টেরয়েডের বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।
আগে ধারণা ছিল অ্যালার্জি একবার হলে আর সারে না। তবে বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথম দিকে ধরা পড়লে অ্যালার্জি জনিত রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবহেলা করলে এবং রোগ অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে।