আলোর অপবর্তন

 দোকান থেকে কোনো CD বা DVD কিনে আনলে গান শুনবে বলে। CD এর পৃষ্ঠা দেখলে খুব চকচকে, রংধনু এর মতো অনেক রঙে রাঙা। কেন হয়? আবার, অন্ধকার ঘরে সূর্যের আলোটা ঢুকতে দিলে দেখা যায় ঘরের মধ্যে আলো যতটুকু থাকার কথা তারচেয়ে একটু বেশি আছে। এটাও কেন হচ্ছে? আশ্চর্য হলেও সত্য, ঘটনা দুটোই অপবর্তন নামের বিশেষ এক ঘটনার কারণে হয়, আমরা এখন সেটা সম্পর্কে জানবো।




অপবর্তন কী সেটা এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। ধরো একটা দেয়াল বেয়ে পানি পড়ছে। পড়তে পড়তে মেঝে তে আসলো। এখন পানি কী মেঝের উপর ছড়িয়ে যাবে নাকি এক রেখা বরাবর চলতে থাকবে? তোমার কী মনে হয়? অবশ্যই ছড়িয়ে যাবে। এই ঘটনাটাই অনেকটা অপবর্তনের মত। আলোর বেলায়ও তাই অনেকটা। আলো যখন তীক্ষ্ণ ধার ঘেষে চলে, তখন সরল পথে না গিয়ে বেঁকে যায় বা সহজ কথায়, ছড়িয়ে যায়। আলো যদি ঠিক সরল পথে চলতো, তাহলে কিন্তু ব্যতিচারও হতো না। কেন? ব্যতিচার হচ্ছে তরঙ্গের উপরিপাতন, আলোর ব্যতিচার হচ্ছে কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের আলোক তরঙ্গের উপরিপাতন। এখন, ইয়ং এর পরীক্ষা নিয়ে একটু কথা বলি, এখানে ব্যতিচার পর্যবেক্ষণ করা যায়। একটা আলোক উৎসের সামনে দুটো চির রেখে দিয়ে দুটো আলোক উৎস তৈরি করা হয়েছিলো। এই দুটো আলোক উৎস এর ব্যতিচারে অনেকগুলো ব্যতিচার ডোরা তৈরি হয়। আলো যদি সরল পথে চলে ধরা হয়, তাহলে কখনোই এতোগুলো ব্যতিচার ডোরা দেখা যেতো না। আলোর বেলায়, চিরের তীক্ষ্ণ ধার ঘেঁষে যেখানে ছায়া থাকার কথা সেখানে আলো পৌছে যায়, আর তারপর ব্যতিচার হয়। তার মানে অপবর্তন ছাড়া ব্যতিচার সম্ভব না। তাহলে বন্ধুরা, অপবর্তনের একটা সংজ্ঞা দাঁড় করানো উচিত বলো কি?



“প্রতিবন্ধকের তীক্ষ্ণ ধার ঘেষে আলোর জ্যামিতিক ছায়া অঞ্চলে প্রবেশ করার ঘটনাকে অপবর্তন বলে।”</spaকে
অপবর্তন কেন হয়? অপবর্তনের ঘটনা প্রমাণ করে আলো এক প্রকার তরঙ্গ আলো তরঙ্গ না হলে সরল পথে চলতো, বেঁকে যেতো না।

তো বুঝলাম, আলো তরঙ্গ তাই অপবর্তন নামের একটা ঘটনা হয়, তাই দরজা অল্প খুলেও একটু বেশি আলো দেখা যায়। কিন্তু CD তে সেই রঙ্গিন বর্ণ দেখা যায় কেন? তা বুঝতে হলে আমাদেরকে অপবর্তনের আরেকটু গভীরে ঢুকতে হবে। চল যাই!

দুই প্রকারের অপবর্তন

আমরা অপবর্তন করতে চাই, তার জন্য আমাদের উৎস পেলাম, তার সামনে খুব ধারালো একটা কিনারা পেলাম, ভালোই! খালি একটা বিপদ হয়ে গেলো যে। আমাদের পর্দাটা বহুদূরে। অনেক দূরে। অসীম দূরে!
এখন অসীম থেকে আসা আলোর জন্য অপবর্তনতো সূক্ষ্ণভাবে পরিমাপ করতে পারবো না। কী করা যায়? তার সমাধানই হচ্ছে ফ্রনহফার শ্রেণীর অপবর্তন।
তোমরা হয়তো জেনে থাকবা যে অসীম থেকে আগত আলোক রশ্মি সমান্তরাল হয়। আমাদের তো অসীম থেকে রশ্মি এনে কাজ করা কঠিন হয়ে যায়, তাই পর্দার একটা আলোক উৎস রাখলাম, রেখে তার সামনে একটা লেন্স L1 এমনভাবে রেখে দিলাম যেন লেন্স থেকে নির্গত রশ্মি সমান্তরাল হয়। ভালো বুদ্ধি, তাইনা? এবার ঐ রশ্মিগুলো একটা চির AB এর মধ্যদিয়ে পাঠালাম, আর চিরের ধার ঘেষে আলো বেঁকে যাবে। এবার ব্যতিচারের মতো অপবর্তন নকশা দেখা আবে। আবার চিরের সামনে আরেকটা লেন্স L2 রেখে দিলাম। এই দ্বিতীয় লেন্সটি অপবর্তনের দরুণ অপবর্তন নকশাটিকে আরো স্পষ্টতর করে তোলে।
কিভাবে? অসীম থেকে আগত রশ্মির সমান্তরালে আসা আলোক রশ্মিগুলোর সমান্তরালে কিছু আলোক রশ্মি আসে, তাদের জন্য L1 লেন্স তার ফোকাস O বিন্দুতে একত্রীভূত করবে। এখানে সবাই সমদশায় মিলিত হয়, তাই এখানে আলোর তীব্রতা সবচেয়ে বেশি হবে।
আবার, আলোক রশ্মি গুলো বেঁকে গিয়ে চির ঘেষে P বিন্দুতে মিলিত হলে তারা ভিন্ন দশায় মিলিত হবে, তাই এখানে উজ্জ্বল হবে না অন্ধকার হবে এটা নির্ভর করে তাদের দশা পার্থক্যের উপর। তবে, স্পষ্টত, এখানে আলোক রশ্মির তীব্রতা কম থাকবে। এমনকি ব্যতিচারের মতো যেমন অনেকগুলা ডোরা দেখা যায়, এখানে দ্বিতীয় উজ্জ্বল ডোরার পর খুব স্পষ্টভাবে অন্ধকার ডোরাগুলো দেখা যায় না।
এই ছিলো আমাদের ফ্রনহফার শ্রেণীর অপবর্তন! চাইলে আমরা একটু অন্যভাবে দেখতে পারি। তোমরা কী এখন লেন্সদুটো ব্যবহারের সুবিধাটা বুঝতে পারছো? চিন্তা করো একটু।
চিরের প্রস্থ d হলে,
উজ্জ্বলতার শর্ত:
dsinθ = (2n+1)λ2
অন্ধকারের শর্ত:
dsinθ = nλ

আগে তো কঠিনটা দেখলাম, এবার সহজটা দেখি।
যেসব ক্ষেত্রে অপবর্তন সৃষ্টিকারী প্রতিবন্ধক বা চির থেকে উৎস বা পর্দা উভয়ই সসীম দূরত্বে অবস্থান করে সেসব অপবর্তনকে ফ্রেনেল শ্রেণির অপবর্তন বলে। উৎস সসীম দূরত্বে হবার অর্থ হলো তা থেকে নির্গত তরঙ্গের তরঙ্গমুখ গোলীয়।

এবার আমরা চিত্রের দিকে লক্ষ করি, দেখা যাচ্ছে XY আলোক তরঙ্গের তরঙ্গমুখ যা গোলীয়।

চিত্রে A এবং B অতি ক্ষুদ্র একটি চিরের দুটি প্রান্তবিন্দু। আলোক তরঙ্গ XY তরঙ্গমুখ দিয়ে AB চির হয়ে প্রবেশ করে পর্দা সম্পূর্ণ একইভাবে আলোকিত করার কথা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হয় না। কারণ চির ঘেষে যে আলোক রশ্মি প্রবেশ করে বা A ও B বিন্দু দিয়ে যে আলোক রশ্মি গমন করে তা বেঁকে যায় তথা SM এবং SN রেখা বরাবর গমন করে। অর্থাৎ আলোক রশ্মি বেঁকে যায় এবং জ্যামিতিক ছায়ার মধ্যে প্রবেশ করে অপবর্তন নকশা তৈরি করে। সমদশা সম্পন্ন তরঙ্গবিন্দু সমূহ SO রেখা বরাবর অবস্থান করে। ছিদ্র যত সরু হবে, অপবর্তন নকশা স্পষ্টতর হবে। ছিদ্র সরু না হলে, অপবর্তন নকশা স্পষ্ট বোঝা যাবে না, কারণ তখন তরঙ্গমুখের আকৃতি পরিবর্তন হবে। মনে করি AB এর দূরত্ব তথা চিরের প্রস্থ d এবং চরম বা অবম সংখ্যাকে n দ্বারা বিবেচনা করি।
তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যদি λ হয় এবং কেন্দ্রীয় চরম বরারবর অক্ষের সাথে n অবমের কোণ θ মনে করলে অন্ধকারের শর্ত হবে
dsinθ = ( (2n+1)λ)/2

আবার উজ্জ্বলতা বা চরমের শর্ত হবে, dsinθ = nλ

এবার উৎস আর পর্দা কাছে। ধরলাম AB একটা সরু চির, আর XY আলোক তরঙ্গের তরঙ্গমুখ (তাহলে চিন্তা করো, AB কত ক্ষুদ্র!)। এবার আমাদের চির ঘেষে আলো বেঁকে গিয়ে জ্যামিতিক ছায়ার মধ্যে প্রবেশ করবে, আর অপবর্তন নকশা দেখা যাবে। ছিদ্র যত সরু হবে, অপবর্তন নকশা স্পষ্টতর হবে। ছিদ্র সরু না হলে, অপবর্তন নকশা স্পষ্ট বোঝা যাবে না, কারণ তখন তরঙ্গমুখের আকৃতি পরিবর্তন হবে।
চিরের প্রস্থ d হলে,
উজ্জ্বলতার শর্ত:
dsinθ = nλ
অন্ধকারের শর্ত:
dsinθ = (2n+1)λ2


Post a Comment

Previous Post Next Post