চুয়াডাঙ্গায় ২০ বছর ধরে পেটে কাঁচি নিয়ে ঘোরা বাচেনা খাতুনের (৫০) অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার আড়াই ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে তার পেট থেকে অপসারণ করা হয় সেই সার্জিক্যাল কাঁচি।
এদিন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বাচেনা খাতুনের অস্ত্রোপচার করেন হাসপাতালের সার্জিক্যাল কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন।
বাচেনা খাতুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নওদা হাপানিয়া গ্রামের দরিদ্র আবদুল হামিদের স্ত্রী। ২০০২ সালে মেহেরপুরের গাংনীর রাজা ক্লিনিকে তার পেটে পাথর অপারেশন করেন চিকিৎসক।
ওই সময় তার পেটে সার্জিক্যাল কাঁচি রেখে সেলাই দিয়ে দেন ডাক্তার। দীর্ঘ ২০ বছর পর বাচেনা খাতুনের পেট থেকে সেই কাঁচি অপসারণ করা হলো।
গত ৪ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হন বাচেনা খাতুন। এরপর থেকে পেটের যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস পরীক্ষাসহ ওষুধ ও খাবার কিনতে কিনতে একেবারে নিঃস্ব হন তিনি।
যে ক্লিনিক থেকে অপারেশন করা হয়েছিল গাংনীর সেই রাজা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সব খরচ বহনের আশ্বাস দেয়। কিন্তু এখন তারা কোনো টাকাপয়সা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন বাচেনা খাতুন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন বলেন, ৪ জানুয়ারি থেকে বাচেনা খাতুনকে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের জন্য অস্ত্রোপচার পিছিয়ে যাচ্ছিল। বর্তমানে তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকায় সফলভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তার পেট থেকে সার্জিক্যাল কাঁচি অপসারণ করা হয়েছে।
বাচেনা খাতুন সহায়-সম্বল বিক্রি করে ২০০২ সালের ২৫ মার্চ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচার করেছিলেন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমান। তার সঙ্গে সহকারী হিসেবে ছিলেন রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা ও অ্যানেস্থেসিয়া করেন ডা. তাপস কুমার।
অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহ পর বাচেনা খাতুনকে প্রেসক্রিপশন করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু সুস্থ হতে পারেননি তিনি। পেটের ব্যথা নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় বছরের পর বছর ডাক্তারের কাছে ছুটেছেন বাচেনা। খুইয়েছেন অর্থ-সম্পদ।
বাচেনা খাতুনের ছেলে ইয়ামিন আলী জানান, গত ২ জানুয়ারি রাজশাহীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার জন্য আমার মাকে নিয়ে যাই। সেখানে এক্স-রে করে চিকিৎসক দেখতে পান মায়ের পেটের মধ্যে সার্জিক্যাল কাঁচি রয়েছে।
তিনি আরও জানান, মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমাদের মাঠে থাকা ১১ কাঠা জমি ও বাড়ির গোয়ালের দুটি গরু বিক্রি করতে হয়েছে। আমি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।
তবে রাজা ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ও চিকিৎসক পারভিয়াস হোসেন ওরফে রাজা জানান, সেই সময় কর্মরত চিকিৎসক মিজানুর রহমান বাচেনা খাতুনের অপারেশন করেছিলেন। আমি বাচেনা খাতুনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সুচিকিৎসা ও ওষুধপথ্যের ব্যয়ভারও নিয়েছি।