আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় খুন হয় শিশুকন্যা

 


ট্রাক্টর চালক আমির হোসেনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল বাড়ির পাশের লাইলি আক্তার নামে এক নারীর সঙ্গে। ওই নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় বাবাকে দেখে ফেলে ৫ বছরের শিশুকন্যা ফাহিমা (৫)। আর এটাই কাল হয় এ অবুঝ শিশুর। এ ঘটনা যাতে পরিবারের অন্যরা জানতে না পারে সেজন্য প্রেমিকা লাইলিকে সঙ্গে নিয়ে নিজের মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে আমির হোসেন। বুধবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ হত্যার রহস্য উদঘাটন নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।


এ ঘটনায় কুমিল্লার দেবিদ্বার ও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে নিহত শিশু ফাহিমার বাবা আমির হোসেন (২৫), রবিউল আউয়াল (১৯), রেজাউল ইসলাম ইমন (২২), মোসা. লাইলি আক্তার (৩০) ও সোহেল রানাকে (২৭) আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানান এ র‌্যাব কর্মকর্তা।


খন্দকার আল মঈন বলেন, নিহত ফাহিমার বাবা আমির হোসেনের সঙ্গে গ্রেফতার লাইলি আক্তারের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। গত ৫ নভেম্বর শিশুটি আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। এতে লাইলি আক্তার ও আমির হোসেন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং লাইলি আক্তার এ বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমির হোসেনকে চাপ দিতে থাকে। লাইলি আক্তারের প্ররোচণায় গত ৬ নভেম্বর আমির হোসেন গ্রেফতার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ভিকটিম শিশুকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করে এবং লাইলিকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি জানায়। মেয়েকে হত্যা করার পর প্রয়োজনে তার স্ত্রীকে ডিভোর্স অথবা হত্যা করে হলেও লাইলি আক্তারকে বিয়ে করবে বলেও পরিকল্পনা করে তারা (আমির-লাইলী)।


তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ নভেম্বর রেজাউল ইসলাম ইমনের (শিশুর চাচা) ফার্নিচার দোকানে হত্যার পরিকল্পনা করেন আমির হোসেন। সঙ্গে ছিলেন রবিউল আউয়াল, রেজাউল ইসলাম ইমন ও সিএনজিচালক সোহেল রানা। তাদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে শিশুকন্যাকে হত্যায় সহযোগিতার চুক্তি হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার জন্য ধারালো ছুরি ও লাশ লুকানোর জন্য দুইটি প্লাস্টিকের বস্তাও সংগ্রহ করে তারা। ৭ নভেম্বর বিকেলে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া এবং চকলেট কিনে দেওয়ার কথা বলে সোহেল রানার সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাবা আমির হোসেন তার মেয়েকে দেবিদ্বার পুরান বাজারের দক্ষিণে নদীর নির্জন স্থানে নিয়ে যান।


তিনি আরও বলেন, লাইলি আক্তারের উপস্থিতিতে আমির হোসেন তার মেয়ে ফাহিমার মুখে চেপে ধরে রাখে ও সর্বপ্রথম নিজেই মেয়েকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। রবিউল ভিকটিমের পায়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে, রেজাউল ইসলাম ইমন পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরকাঘাত করে। সোহেল ভিকটিমের পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। পরে বাবা আমির হোসেন নিজেই ফাহিমার গলায় চেপে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর শিশু ফাহিমার মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ইমনের গরুর ঘরে ড্রামে লুকিয়ে রাখে। ৯ নভেম্বর রাতে সোহেল রানার সিএনজি অটোরিকশায় করে আমির হোসেন, রবিউল, ইমন বস্তাবন্দি ফাহিমার মরদেহ কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর কালভার্টের নিচে ডোবায় ফেলে দেয়।


গত ১৪ নভেম্বর পুলিশ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর নজরুল মাস্টারের বাড়ির সামনে কালভার্টের নিচে সরকারি খালের ডোবা থেকে ওই শিশুকন্যার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে। পরে পরিচয় নিশ্চিত করে নিহতের পরিবার। ওই ঘটনায় ঘাতক বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব-১১ ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং রহস্য উদঘাটন এবং জড়িত বাবাসহ পাঁচ আসামিকে আটকে সমর্থ হয়।


কীভাবে বাবাসহ হত্যাকারীদের শনাক্ত করা হলো জানতে চাওয়া হলে কমান্ডার মঈন বলেন, শিশু ফাহিমাকে হত্যার পর গরুর খাবারের ২৫ কেজির একটি বস্তায় ভরে ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেটিই প্রথম আমলে নেয় র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা। বস্তার খোঁজে পার্শ্ববর্তী দুটি গরুর খামারে অভিযানে যায়। সেখানে ইমনের বাবার খামারে গিয়ে ২৫ কেজি গরুর খাবারের বস্তা দেখে র‌্যাব সদস্যরা। এরপর ইমনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য। এরপর একে একে গ্রেফতার করা হয় বাবা আমির হোসেনসহ অন্য সহযোগীদের।

Post a Comment

Previous Post Next Post