মাত্র ১০৩ টাকা খরচ করে স্বপ্ন পূরণ হলো জয়পুরহাটের ১৯ তরুণ তরুণীর। ঘুষ-তদবির ছাড়াই পু'লিশে চাকরি হয়েছে তাদের। পূরণ করতে পেরেছেন হতদরিদ্র বাবা-মা’র স্বপ্ন। এই খুশিতে কেঁদে ফেললেন অনেকেই।
বুধবার রাতে পু'লিশ লাইন্সে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন জয়পুরহাট পু'লিশ সুপার মাছুম আহাম্ম'দ ভুঞা।
চূড়ান্তভাবে মনোনীতদের মধ্যে এতিম, রং মিস্ত্রী'র মে'য়ে, নাপিতের ছে'লে, চাতা'লের নাইট গার্ডের ছে'লেও রয়েছেন। কেউ কেউ নিজেই টিউশনি করে লেখাপড়া করেছেন। আবার কেউ ঢাকায় রিকশা চালিয়ে, ট্রাক চালিয়ে বা ডিমের হ্যাচারিতে কাজ করে নিজের পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। আজ তারা পু'লিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
জয়পুরহাট সরকারি শি'শু পরিবারে বেড়ে ওঠা এতিম মাহমুদুল হাসানের চাকরি হয়েছে পু'লিশ কনস্টেবল পদে। নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আবেগাপ্লুত মাহমুদুল। কথা বলতে পারছিলেন না। ক্ষেতলাল উপজে'লার বিনাই এলাকার এ তরুণ বলেন, ‘আমা'র বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। আমা'র মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আমাদের নিজস্ব থাকার কোনো জায়গা নেই। আমি বাংলাদেশ পু'লিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরেছি। দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখবো।’
‘ঘুষ ছাড়া চাকরি আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। ছোট থাকতে বাবার মৃ'ত্যু হয়। পরে মায়ের আবার বিয়ে হয়। তারপর সৎ বাবার কাছে থেকে বড় হই। নিজের পড়াশোনা চালাতে স্কুলের এক শিক্ষকের কাছ থেকে মাসে এক হাজার পেতাম। জীবিকা নির্বাহী করতে হাঁস-মুরগি পালন করেছি। এভাবে পড়াশোনা চালিয়েছি।’ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর এভাবে অনূভূতি ব্যক্ত করেন আদর্শ গ্রামের মৃ'ত রহিম খালকোর ছে'লে সজল খালকো।
সজল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই গল্প শুনেছি টাকা ছাড়া পু'লিশে চাকরি হয় না। তবে পু'লিশ বদলে যাচ্ছে। আম'রা এ বদলে যাওয়ার যুগের অ'গ্নি সাক্ষী। আম'রা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করতে চাই।’
রংমিস্ত্রী'র মে'য়ে ফাতেমা আক্তার। স্বপ্ন ছিল পু'লিশে চাকরি করার। কিন্তু স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার যোজন যোজন ব্যবধানে আশাহত হয়েছিলেন। হঠাৎ একদিন জানতে পারলেন পু'লিশে চাকরি পেতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। পরে আবেদন ফরম পূরণ করে লাইনে দাঁড়ালেন। সব বাছাইয়ে মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হলেন।
জয়পুরহাট পু'লিশ লাইন্সে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে তার নাম ঘোষণার পর আনন্দে কেঁদে ফেললেন এ তরুণী।
শুধু মাহমুদুল হাসান, সজল খালকো, ফাতেমা নয়, তাদের মতোই কনস্টেবল পদে জয়পুরহাট জে'লায় ১৯ জন শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতায় মাত্র ১০৩ টাকায় চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন এবং অ'পেক্ষমান আছেন আরও ৫ জন।
জয়পুরহাট জে'লায় পু'লিশের কনস্টেবল পদে গত ১৫ ও ১৬ নভেম্বর ৭৬০ জন চাকরি প্রার্থী প্রাথমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। এতে যাচাই-বাছায়ের পর শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করে ১৬৭ জন প্রার্থী। গেল ১৭ নভেম্বর যাদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ৪৫ জন।
আর ২৪ নভেম্বর বুধবার চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করে ২৪ জন। যাদের মধ্যে ওইদিনই নিয়োগ দেওয়া হয় ১৯ জনকে। অ'পেক্ষমান আছেন অন্য ৫ জন।
ফলাফল ঘোষণা শেষে পু'লিশ সুপার মাছুম আহাম্ম'দ ভূঞা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পু'লিশ কনস্টেবল নিয়োগ নজিরবিহীন ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইজিপির শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এ নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য কড়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আম'রা পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাবনার অ'তিরিক্ত পু'লিশ সুপার (সদর সার্কেল) রোকন উদ্দিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অ'তিরিক্ত পু'লিশ সুপার (সদর হিসাব) ফজল-ই-খুদা, জয়পুরহাটের অ'তিরিক্ত পু'লিশ সুপার (প্রশাসন ও অ'প'রাধ) তরিকুল ইস'লাম, জয়পুরহাটের চার থা'নার ভা'রপ্রাপ্ত কর্মক'র্তা (ওসি) ও পু'লিশ সদস্যরা।