জনবলসহ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা নির্বাচনের কফিনে সর্বশেষ পেরেক বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার।
ইসি মাহবুব তালুকদার বলেছেন, কী উদ্দেশ্যে এই আত্মঘাতী ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এনআইডি স্থানান্তরের নির্দেশ কমিশনের অঙ্গচ্ছেদের নামান্তর।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
ইসি মাহবুব বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের উদ্বেগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। বলেন, মন্ত্রিপরিষদের যুগ্ম সচিবের সই করা পত্রে এনআইডি হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় ‘নির্বাচন কমিশন’–এর পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে এনআইডির বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের নির্দেশ প্রদান কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচ্য।
তিনি বলেন, ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এর ফলে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেইসনির্ভর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণে জটিলতার সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া এতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র ভূলণ্ঠিত হবে। এটি করা হলে সংবিধানের ১১৯ ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে না বলে মনে করেন ইসি মাহবুব।
এনআইডি অনুবিভাগ স্থানান্তরের বিষয়টি আগে কমিশনকে না জানানো নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের শামিল উল্লেখ করে ইসি মাহবুব বলেন, নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এমন ঘোরতর দুর্দিন আর আসেনি।
এই কমিশনার বলেন, সংবিধানের ১০৮(৪) ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন। এটি কমিশনের জন্য রক্ষাকবচ হলেও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এখন কোথায়, এ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ অন্যত্র স্থানান্তর সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার অন্তিমযাত্রার আয়োজন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন মাহবুব তালুকদার।