মে'য়েকে বলেছি, সব জমি তোর আমাকে শুধু দু’মুঠো খাবার দিস



একটি সন্তান লাভের জন্য কত কিছুই না করেন বাবা-মা। জন্মের পর যত্ন করে সন্তানকে মানুষ করেন বাবা-মা। সন্তান বড় হলে তাকে নিয়ে বাবা-মা হাজারো স্বপ্ন দেখেন। কোনো কোনো সন্তান বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে আবার কেউ তাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমা'র করে দেয়। এমনকি বাবা-মাকে বোঝা মনে করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় সন্তানরা। এমনই এক বাবার স্বপ্ন ভঙের ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুরের সদরপুর উপজে'লার সদর ইউনিয়নের দশহাজার গ্রামে। ফরিদপুরের সদরপুর উপজে'লার সদর ইউনিয়নের দশহাজার গ্রামের বাসিন্দা ৮২ বছর বয়সী বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ খাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন তার মে'য়ে আসমা খাতুন।

বৃদ্ধ আজিজ খাঁ পঙ্গু। পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়াতে পারেন না। বসে বসে চলাচল করেন। এমন অসহায় বাবার জমিজমা দখল করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন মে'য়ে আসমা। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এখন আজিজ খাঁর ঠাঁই হয়েছে ফরিদপুর বাস টার্মিনালে। টার্মিনালের যাত্রী সাধারণের জন্য স্থাপিত টয়লেটের পাশের এক পাশে রাত কা'টান তিনি। দিনের বেলায় টার্মিনালে ভিক্ষা করেন, বিভিন্ন কাউন্টার ও চলাচলকারী মানুষের কাছ থেকে যা পান তা দিয়ে কোনোমতে দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে আছেন বৃদ্ধ আজিজ খাঁ। বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ফরিদপুর বাস টার্মিনালের একটি কাউন্টারের সামনে তার দেখা মেলে। সেখানে বসে ভিক্ষা করছিলেন আজিজ খাঁ।

তখন জাগো নিউজের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ খাঁর। বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ খাঁ ভালো'ভাবে কথা বলতে পারেন না। ভাঙা ভাঙা গলায় কথা বললেও কথাগুলো জড়িয়ে যায়। এ প্রতিবেদক তার দুঃখের কথা শুনতে চাইলে বেশ খুশি হন। এরপর আব্দুল আজিজ খাঁ শুরু করেন তার আজকের এই পরিণতির কথা। বলেন, বর্তমানে আমা'র বয়স ৮২ বছর। স্বাধীনতার-পূর্ববর্তী সময়ে পাশের গ্রামের একটি মে'য়ের সঙ্গে আমা'র বিয়ে হয়। ওই স্ত্রী'র ঘরে এক পুত্রসন্তান হয়। ওই সন্তানের নাম নজরুল। সে এখন কুষ্টিয়ায় থাকে, কাঠমিস্ত্রির কাজ করে। প্রথম স্ত্রী' মা'রা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করি আমি। দ্বিতীয় স্ত্রী'র এক ছে'লে ও দুই মে'য়ে।

ছে'লে ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে। মে'য়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। দ্বিতীয় স্ত্রী' অন্য একজনের সঙ্গে চলে গেছে। এরপর তৃতীয় বিয়ে করি আমি। তৃতীয় স্ত্রী'র ঘরে জন্ম নেয় এক কন্যাসন্তান। তার নাম আসমা। এরপর আসমাকে আমা'র কাছে রেখে অন্য একজনের সঙ্গে চলে যায় আমা'র তৃতীয় স্ত্রী'। আসমাকে ঘিরে চলতে থাকে আমা'র জীবন। আসমা বড় হলে পাশের গ্রামের একটি ছে'লেকে পছন্দ করে বিয়ে করে। কয়েক বছর যেতে না যেতেই আসমা ওই স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে একই এলাকার রফিক খাঁ নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে আমা'র বাড়িতেই থাকতে শুরু করে। এরপরই আমা'র ওপর নেমে আসে নি'র্যাতন। আসমা ও তার স্বামী রফিক আমা'র ওপর প্রতিদিনই নি'র্যাতন চালাতো। আব্দুল আজিজ খাঁ বলেন, স্বাধীনতা যু'দ্ধের পরে আমা'র শরীরে এলার্জি দেখা দেয়।

এরপর ধীরে ধীরে শরীর অবশ হয়ে আসতে থাকে, একপর্যায়ে আমা'র পায়ের শক্তি হারিয়ে ফেলি। চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়। কোনোরকম বসে বসে চলাফেরা করি। ওই সময় থেকে আজ পর্যন্ত এভাবেই চলছি আমি। দশহাজার গ্রামে ৬২ শতাংশ জমির ওপর আমা'র বাড়ি। বাড়ির পাশেই রয়েছে আরও দুই একর জমি। আসমা'র দ্বিতীয় বিয়ের পর তাকে আমি ২৩ শতাংশ জমি দেই বাড়ি করার জন্য, আসমা ওই জায়গায় ঘর তুলে থাকতে শুরু করে। এরপর পুরো বাড়িটি দখল করে নেয় আসমা ও তার স্বামী রফিক। আমা'র অন্য ছে'লে-মে'য়েরা বাইরে থাকায় তারা এদিকে আর আসে না, খোঁজখবরও নেয় না। আব্দুল আজিজ বলেন, গত বছর আমাকে নি'র্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় আসমা। এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছে গিয়েও আমি বিচার পাইনি।

আসমা ও রফিক সবাইকে ম্যানেজ করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমাকে যখন বাড়ি থেকে বের করে দেয় আমি বলেছিলাম আমাকে শুধু দু’মুঠো খাবার দিস, জমিতো তোদেরই। কিন্তু তারা আমাকে বোঝা মনে করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বাড়ি থেকে বের হয়ে আমা'র ভাগনি কোহিনুরের বাড়ি ঢেউখালীতে যাই। সেখানে কয়েক দিন থাকার পরই ভাগনি তার নামে জমি লিখে দিতে বলে, পরে আমি সেখান থেকে চলে আসি। চলতে চলতে একপর্যায়ে ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডে আসি। এক বছর এখানেই আছি। রাতে টয়লেটের পাশে ঘুমাই, দিনের বেলায় ভিক্ষা করি। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে এক ভদ্রলোক আমা'র কথাগুলো শুনে আমাকে জে'লা লিগ্যাল এইড অফিসে যেতে বলেন। আমি সেখানে গিয়ে আমা'র মে'য়ে আসমা'র বি'রুদ্ধে একটি অ'ভিযোগ দিয়েছি।

ফরিদপুর বাস টার্মিনালের শান্ত হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মীর কাবুল বলেন, প্রায় এক বছর ধরে বৃদ্ধ আজিজ এখানে রয়েছেন। রাতে টয়লেটের পাশে থাকেন। দিনের বেলায় ভিক্ষা করেন। ভিক্ষা করে কোনোদিন খাবার টাকা জোগাড় হয় আবার কোনোদিন হয় না। খাবার টাকা জোগাড় না হলে আমি সেদিনকার খাবার তাকে দেই। মানুষটা অনেক ভালো। বয়স হয়েছে, এখন অনেক অ'সুস্থ তিনি। মে'য়ে তার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে তার বিচার হওয়া উচিত। সদরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল ইস'লাম বাবুল বলেন, শুধু আসমা নয়, আজিজ মিয়ারও দোষ আছে। ঘটনা যা শুনেছেন তা পুরো সঠিক নয়।

ঘটনা কি ঘটেছে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে ফোনের লাইন কে'টে দেন। পরবর্তীতে ইউপি চেয়ারম্যানকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। জে'লা লিগ্যাল এইড অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ খাঁ তার মে'য়ে আসমা'র বি'রুদ্ধে যে অ'ভিযোগ দিয়েছেন সেই অ'ভিযোগের ভিত্তিতে আসমাকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ খাঁর মে'য়ে আসমা'র সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ফোনের লাইন কে'টে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখেন। পরে একাধিকবার কল দিয়ে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়

Post a Comment

Previous Post Next Post