পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৫ কোম্পানির শেয়ার দর এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ৪৫ শতাংশ থেকে ১৭৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর আগেও এসব কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে দ্বিগুণ থেকে পাঁচ গুণ। কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে কারসাজিকারীরা ফের বেপরোয় হয়ে উঠেছে। এসব শেয়ার থেকে সমূহ দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব ফেরাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরফলে পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাবও ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কারসাজি চক্র বাজারকে ম্যানুপুলেট করার চক্রান্তে মেতে উঠেছে। তারা কোনো কারণ ছাড়াই স্বল্প মূলধনী ও দুর্বল মৌলের কিছু শেয়ার দর আকাশচুম্বী করে তুলেছে। এখন কোম্পানিগুলো সম্পর্কে নানা রকম গুজব ছড়াচ্ছে, যাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আর আকাশচুম্বী দরের এসব শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাঁধে ফেলে অনায়াশে তারা সটকে পড়তে পারে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে অদৃশী শক্তি ১৯৯৬ সালে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রাস্তার নিয়ে খেলেছিলেন, তারাই আবার নতুন রুপে নুতন কিছু পুঁজিপতি নিয়ে অশুভ খেলায় মেতেছেন। এ শক্তিটিই খেলেছে ২০১০ সালেও। মূলত ২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ে বিপর্যস্ত বাজারে যতবার আশার আলো দেখা গেছে, এ চক্রটির কারণেই সেই আলো বার বার নিবে গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক মাসের কম সময়ে তালিকাভুক্ত ১৫টি কোম্পানির শেয়ার দর ৪৫ শতাংশ হতে ১৭৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এসব শেয়ার কিছুদিন আগেও দ্বিগুণ, তিনগুণ হারে বেড়েছে। তারপর কিছুদিন বিরতি দিয়ে এসব শেয়ার নিয়ে ফের কারসাজিতে মেতেছে তারা। এখন বাজারে গুজব ছড়াচ্ছে, বীমা খাতের কোন শেয়ারই ১০০ টাকার নিচে থাকবে না। কোন কোন শেয়ার দর ২০০ টাকার বেশি হয়ে যাবে।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে সদ্য তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি দেশ জেনারেল ইন্সুরেন্স, প্রভাতী ইন্সুরেন্স, বিএনআইসিএল ইন্সুরেন্স, ফেডারেল ইন্সুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্সুরেন্স, অগ্রণী ইন্সুরেন্স, পূরবী ইন্সুরেন্স, ঢাকা ইন্সুরেন্স, সোনারবাংলা ইন্সুরেন্স, নর্দার্ন ইন্সুরেন্স ও প্রাইম ইন্সুরেন্সের। এছাড়া, দর বেড়েছে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, শাইনপুকুর সিরামিক এবং এমারেন্ড ওয়েলের।
দেশ জেনারেল ইন্সুরেন্স: কোম্পানিটি গত ২৯ মার্চ অভিহিত মূল্যে পুঁজিবাজারে আসে। প্রথমদিন কোম্পানিটির শেয়ার ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে লেনদেন হয় ১৫ টাকায়। পরের দিনও ৫০ শতাংশ দর বৃদ্ধি নিয়ে উঠে ২২ টাকা ৫০ পয়সায়। এরপর টানা ১০ শতাংশ দর বৃদ্ধি নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার ৪১ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দর বেড়েছে ১৭৩ শতাংশ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্য আয় অনুপাত (পিই) অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৬ টাকার পরই ঝুঁকিতে পড়েছে। এখন মহাঝুঁকিতে রয়েছে। কোম্পানিটির বর্তমানে পিই ৬১.৫০।
প্রভাতী ইন্সুরেন্স: গত ২৪ মার্চ ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৭৫ টাকা ১০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২৫ টাকা ৬০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৬৭.২৪ শতাংশ।ঘোষিত ১৭ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড বিবেচনায় নিলে এর বৃদ্ধির হার আরও বাড়বে। কোম্পানিটির বর্তমান পিই ৪০.৫২।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স কোম্পানি (বিএনআইসিএল): গত ২৪ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৬৫ টাকা ৯০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০৯ টাকায়। দর বেড়েছে ৬৫.৪০ শতাংশ। কোম্পানিটির পিই ৫২.৭৪।
ঢাকা ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩৫ টাকা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৩.৫০ টাকায়। দর বেড়েছে ৫২.৮৫ শতাংশ। কোম্পানিটির ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিবেচেনায় নিলে দর বেড়েছে ৬০ শতাংশ।
প্রাইম ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৯ টাকা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪২ টাকা ৮০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৪৭.৫৮ শতাংশ। ঘোষিত ডিভিডেন্ডে বিবেচনায় নিলে দর বেড়েছে ৬২.৩৪ শতাংশ।
ক্রিস্টাল ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩২ টাকা ৪০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫২ টাকা ৩০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৬১.৪২ শতাংশ।
ফেডারেল ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ টাকা ৬০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৫৭.৭১ শতাংশ।
পূরবী ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৪ টাকা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৫ টাকা ৯০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৪৯.৫৮ শতাংশ।
সোনারবাংলা ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৪২ টাকা ৮০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৩ টাকা ১০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৪৭.৪২ শতাংশ।
নর্দার্ন ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৯ টাকা ৬০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪২ টাকা ৯০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৪৫ শতাংশ।
হাইডেলবার্গ সিমেন্ট: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৬২ টাকা ৬০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২২৫ টাকা ৪ পয়সায়। গতবছর ডিভিডেন্ড না দেয়া লোকসানি কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৪৯.৬০ শতাংশ।
এমারেন্ড ওয়েল: গত ২৪ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ টাকা ৬০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৫৭.৭১ শতাংশ।
শাইনপুকুর সিরামিকস: গত ১১ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৮ টাকা ৫০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ টাকায়। দর বেড়েছে ৪৫.৯৪ শতাংশ।
সূএ: শেয়ারনিউজ