একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং ব্যক্তিগত বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তার সকল কাজ-কর্মে প্রভাব ফেলে থাকে। আর যারা শেয়ার ব্যবসা করেন তাদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিষয়গুলো উৎপ্রোতভাবে জড়িত। জীবনে যারা একটু ধীরস্থির প্রকৃতির তারা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে সফল হতে পারে। আর যারা অস্থির প্রকৃতিক তারা কখনো সফলকাম হতে পারে না। তবে সবাই তো একরকম না।
এর আগে আমরা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করার উপায় (যেমন- ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস) নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে স্বল্পমেয়াদে শেয়ার ট্রেড করেও অনেকেই সফল হচ্ছেন। আর সেজন্যই আমরা আপনাদের কাছে কিছু টেকনিক্যাল এনালাইসিস নিয়ে এসেছি।
টেকনিক্যাল এনালাইসিস করতে গেলে আপনাকে জ্যামিতিক আকার প্রকারভেদ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে। তাই ক্লাস ফাইভের বই আবারও কাজে লেগে যেতে পারে। চলুন তাহলে দেখি, টেকনিক্যাল এনালাইসিস আপনার ব্যবসায়িক সাফল্য এনে দেবার জন্য কী করতে পারে।
টেকনিক্যাল এনালাইসিসের সুবিধাসমূহ:
১) স্বল্পমেয়াদে (১ থেকে ৪ সপ্তাহ) একটি শেয়ারের প্রাইস মুভমেন্ট অনুমান করতে পারবেন।
২) এটি আপনাকে এই শেয়ার সম্পর্কে মানুষের মনোভাব (আগ্রহ আছে, না নেই) বুঝতে সাহায্য করবে।
৩) স্বল্পমেয়াদে বাজারের ওঠা নামায় ক্ষতিগ্রস্ত হবার হাত থেকে সুরক্ষা দেবে।
টেকনিক্যাল এনালাইসিস অতিরিক্ত সুবিধাসমূহ:
১) দীর্ঘমেয়াদে (১ বছর থেকে ৩ বছর) শেয়ার প্রাইস এর Growth/Degrowth সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন না (তা করতে হলে ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস শেখা লাগবে)।
২) টেকনিক্যাল এনালাইসিস সব সময় সঠিক হবেনা (কোন কিছুই ১০০% বুলেট প্রুফ না, তাই পাশাপাশি ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস করলে ভাল রেজাল্ট পাবেন)।
৩)স্বল্পমেয়াদের প্রাইস মুভমেন্ট বুঝতে পারলেও ঠিক কখন মুভমেন্ট হবে (অর্থাৎ কোনদিন) তা জানা সম্ভব নয়।
আশা করছি আপনার আশা-প্রত্যাশা ঠিকঠাক করে ফেলেছেন। চলুন তাহলে টেকনিক্যাল এনালাইসিস শেখার প্রাথমিক ধাপগুলো পার করে ফেলি-
ক) সাপোর্ট/Support : শেয়ার এর প্রাইস হিস্টরি থেকে দেখতে পাবেন যে একটি নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত দাম কমার পর তা আবার বাড়তে শুরু করে। এই সীমা হচ্ছে এই শেয়ারের সাপোর্ট। উদাহরণ – একটি শেয়ারের দাম গত ছয় মাসে যদি হয় ৪০, ৪৫, ৪১, ৩৭, ৪০, ৪৩ টাকা। তাহলে এই শেয়ারের সাপোর্ট প্রাইস হচ্ছে ৩৭ টাকা। কারণ এর পরেই দাম আবার বাড়া শুরু করেছে।
খ) রেজিস্টেন্স/Resistance : এটি হচ্ছে সাপোর্ট এর ঠিক বিপরীত। অর্থাৎ দাম যতটুকু বাড়ার পর শেয়ারের দাম আবার কমা শুরু হয় (অতীত প্রাইস গ্রাফ দেখুন)। আগের উদাহরণটাই নেই – দেখতে পাচ্ছেন যে Resistance হচ্ছে ৪৩ টাকা এবং ৪৫ টাকা। অর্থাৎ এই দাম এর রেঞ্জ এ আসার পর আবার কমে যাচ্ছে।
গ) ব্রেকআউট/Breakout : কিছু সময় আছে যখন Support/Resistance না মেনেই একটি শেয়ারের দাম বেড়ে যায় বা কমে যায় (ভয় নেই, টেকনিক্যাল এনালাইসিস আপনাকে আগেই সাবধান করে দেবে!)। এই অবস্থার নাম ব্রেকআউট।
ঘ) রিভারসাল/Reversal : প্রাইসগ্রাফ থেকে দেখা যায় অনেক সময় একটি শেয়ার যে হারে পড়েছে, পরবর্তীতে ঠিক সে হারেই আবার বেড়ে যায়। (অথবা উল্টোটা, অর্থাৎ যেভাবে বেড়েছে, সেভাবেই পড়েছে)। এই প্যাটার্নটির নাম Reversal যা যেকোনো শেয়ার বাজারে অহরহ দেখা যায়।
ওপরের এই ৪টি ধারণা থেকে আপনি কিছু প্যাটার্ন ড্রয়িং শিখবেন। তবে ড্রয়িং এর ঝামেলা (!) তে যাবার আগে রেডিমেড কিছু প্যাটার্ন জেনে নিন-
১) বুলিশ/Bullish : শেয়ারের দাম যখন উর্ধ্বমুখী প্রবণতায় থাকে তাই Bullish। এসময়ে শেয়ার বিক্রি করে ফেলুন, অথবা কিনতে চাইলে দাম পড়ার অপেক্ষায় থাকুন।
২) বেয়ারিশ/Bearish : শেয়ারের দাম যখন নিম্নগামী প্রবণতায় থাকে তাই Bearish। এ সময়ে শেয়ার কেনা ঠিক নয়, অপেক্ষা করুন দাম পড়ে Resistance এ আবার দাম বেড়ে যাওয়া শুরু পর্যন্ত।
৩) কনটিনিউয়েশন/Continuation : কিছু সময় শেয়ারের দাম বাড়লে বাড়তেই থাকে (আবার পড়লে পড়তেই থাকে)। আবার দেখা যায় দাম বেড়ে গিয়ে এক জায়গাতেই আটকে আছে, অথবা পড়ে গিয়ে তলানিতেই ঠেকে আছে অনেক দিন - এই অবস্থাকেই Continuation বলে। দুঃখিত এই প্যাটার্ন পেলে কি করবেন তা আজই বলতে পারছিনা। কারণ তার আগে আরো অনেক কিছু আপনাদের কে বলতে হবে।
পরিশিষ্ট?
নাহ, টেকনিক্যাল এনালাইসিস শেখা এখনই শেষ হয়নি (আসলে শুরুই হয়নি)। খুব শীঘ্রই আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আর্টিকেল পাবলিশ করা শুরু করতে যাচ্ছি। সেখানে আমরা শেয়ার ইনভেস্টিং এবং ট্রেডিং এর সব আর্টিকেল এবং গাইড (ই বুক) এর পশরা সাজিয়ে অপেক্ষা করবো আপনাদের জন্য। কারণ সব কিছু তো আপনাদের ভালর জন্যই করা। আপনার বিনিয়োগ এবং ট্রেড শুভ হোক।
(লেখাটি শেয়ারনিউজ২৪.কম-এ ১৪ জুলাই ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। পাঠকদের সুবিধার্থে সামান্য পরিমার্জন করে পুনরায় তুলে ধরা হলো। আশা করি পাঠকরা উপকৃত হবেন।)
সূএ: শেয়ারনিউজ