জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোট ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মডেল মসজিদ প্রকল্পও রয়েচে। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৪৪৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারি অর্থায়নে ব্যয় হবে তিন হাজার ৬৮২ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, একনেক সভায় ১০ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি সংশোধিত ও পাঁচটি নতুন।
প্রতি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের ব্যয় ৭১৩ কোটি টাকা বাড়ছে। ২০২০ সালের মধ্যে সব কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সম্প্রতি মাত্র ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হয়। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৯ হাজার ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এরপরে অনুমোদিত প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এবার প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্প ব্যয় ৭১৩ কোটি টাকা বাড়ছে।
নানা কারণে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। কতিপয় খাত যেমন—অফিসারদের বেতন, বিদ্যুৎ, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, নিবন্ধন ফি, পেট্রল, লুব্রিক্যান্ট, গ্যাস ও জ্বালানি, অন্যান্য মনোহারি, মোটরযান মেরামত ও সংরক্ষণ, অফিস সরঞ্জাম, ভবন নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে।
এছাড়া আপ্যায়ন ব্যয়, চুক্তিভিত্তিক যানবাহন ব্যবহার, ব্যাংক চার্জ, সাকুল্য বেতন, কুরিয়ার, যাতায়াত ব্যয়, আউটসোর্সিং, শ্রমিক মজুরি, নিয়োগ পরীক্ষা, মুদ্রণ ও বাঁধাই, অন্যান্য মনোহারি (গণপূর্ত), ডিজাইন ও ড্রইং (গণপূর্ত), আসবাবপত্র মেরামত ও সংরক্ষণ, কম্পিউটার মেরামত ও সংরক্ষণ কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অফিস সরঞ্জামাদি মেরামত ও সংরক্ষণ, অন্যান্য যন্ত্রপাতি মেরামত ও সংরক্ষণ, অভ্যন্তরীণ শোভাবর্ধন কাজ অন্তর্ভুক্ত করায় মূলত ব্যয় ও সময় বাড়ছে।
এছাড়া ‘জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি দক্ষতা প্রকল্পে ১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। একনেকে ‘ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ও অর্থনীতি সমৃদ্ধকরণ’ নতুন প্রকল্প একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। ‘সেচ অবকাঠামো পুনর্বাসন’ প্রকল্পের ব্যয় হবে ৩২২ কোটি টাকা। ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। ‘বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৩ কোটি টাকা।
মোংলা থেকে চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত নতুন নৌরুট খনন করা হবে। নৌপথের মোট দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটার। নৌপথ খননে ব্যয় বাড়ছে আরও ৩৩৪ কোটি টাকা। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী মালামাল পরিবহনের জন্য এ রুটের গভীরতা বাড়ানো হবে। ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতা) জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্যই মূলত খনন করা হবে।
এছাড়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আওতায় চট্টগ্রাম ও রাজশাহী ক্রীড়া স্কুল প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও ফরিদপুর) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ৪৫৬ কোটি টাকা। প্রকল্প ১০টি চূড়ান্তভাবে একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।